শিগগিরই খুলছে পুড়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজ
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগুনে পুড়ে যাওয়া আমদানি কার্গো ভিলেজে দ্রুতগতিতে চলছে সংস্কার ও পুনর্গঠন কাজ। ইতোমধ্যে শেডের ভেতরের অধিকাংশ পরিষ্কার কার্যক্রম শেষ হয়েছে, পাশাপাশি পুরোদমে চলছে প্রযুক্তিগত ও স্থাপনা-সংস্কারের কাজ।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হচ্ছে। তাদের প্রদান করা কাঠামোগত নিরাপত্তা মূল্যায়ন অনুসরণ করে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সেকশন পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর সূত্রে আরও জানা গেছে, সংস্কার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে করা হচ্ছে—যেন আগুনে পুড়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজটি আগামী জানুয়ারি ১৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ১০ তারিখের মধ্যে পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই সব কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে, যাতে আমদানি কার্যক্রম আগের মতো স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসে।
সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান বলেন, পুরোনো কার্গো ভিলেজের সংস্কার কাজ যত দ্রুত সম্পন্ন করে পুনরায় চালু করা হবে, ব্যবসায়ীদের জন্য ততই সুবিধা বাড়বে। বর্তমানে কার্গো ডেলিভারির ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
তিনি জানান, এখন মালামাল ডেলিভারি করতে হচ্ছে দুইটি পৃথক গেট, গেট ৮এ ও গেট ৯—ব্যবহার করে, যা কার্গো ভিলেজের দুই প্রান্তে অবস্থিত। ফলে ব্যবসায়ীদের একই চালান নিতে গিয়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটোছুটি করতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগছে, শ্রম বেশি দিতে হচ্ছে এবং ডেলিভারি কার্যক্রমেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
মোখলেছুর রহমান আরও বলেন, পুরোনো কার্গো ভিলেজ দ্রুত চালু হলে ব্যবসায়ীরা এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যেই কাস্টমস হাউস সর্বদা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে মালামালের জট কমাতে আমাদের কাস্টমস টিম পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। ছুটির দিনেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন, যেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের কোনো ভোগান্তি না হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার বোশরা ইসলাম বলেন, বিমান বর্তমানে বিকল্প স্থানে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি আরও জানান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কার্গো হাউসটি সংস্কার সম্পন্ন করলেই বিমান পুনরায় সেখানে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করবে।
তার ভাষায়, "সংস্কারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প স্থানে কার্গো কার্যক্রম চলবে।"
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর শনিবার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আগুনে পুড়ে যায় হাজার কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক সরঞ্জাম। বর্তমানে কার্গো হাউস না থাকায় বিপুল পরিমাণ পণ্য খোলা আকাশের নিচে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যা কুয়াশায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
আগুনের কারণে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে যে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে বিকল্প ব্যবস্থাপনাও চালু রাখা হয়। নতুনভাবে ব্যবহারের আগে পুরো শেড আবারও নিরাপত্তা ও মান যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। কার্গো শেড পুনরায় চালু হলে আমদানি বাণিজ্যের গতি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Comments