সাদাপাথরে বিছিয়ে দেওয়া হলো লুটের ১২ হাজার ঘনফুট পাথর

সাদাপাথরকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সিলেট প্রশাসন বুধবার (১৩ আগস্ট) থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। গতকাল রাতের মধ্যে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর সাদাপাথরে বিছিয়ে দেওয়া হয়। এই কাজে উপজেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
এর আগে, গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টাস্কফোর্স সাদাপাথরের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের সময় কালাইরাগ এলাকা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়।
এছাড়া, কলাবাড়ি এলাকায় পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু যন্ত্রের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। রাতের মধ্যেই জব্দকৃত পাথরগুলো সাদাপাথরে বিছিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানটির পূর্বের অবস্থান ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, 'নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সহায়তা করে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় যতটুকু পর্যন্ত সেনাবাহিনী যেতে পারে, তারা ততটুকু পর্যন্ত গেছে। রাতে এসব পাথর সাদাপাথরে বিছিয়ে দেওয়া হয়।'
এর আগে, বুধবার (১৩ আগস্ট) সিলেট জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় সাদাপাথর রক্ষায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ।
বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট ও বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সিলেট সার্কিট হাউসে সর্বস্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মিলিত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো—
১. জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
২. গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্ট যৌথ বাহিনীসহ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।
৩. অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বন্ধ করার অভিযান চলমান থাকবে।
৪. পাথর চুরির সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হবে।
৫. চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে ধলাই নদের উৎসমুখেই সাদাপাথরের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর এলাকাজুড়ে এ পর্যটনকেন্দ্র। ছোট-বড় অসংখ্য পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলের স্রোতোধারা এ পর্যটনকেন্দ্রের মূল আকর্ষণ। এই সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় জমান। এখন পাথর লুট হয়ে যাওয়ায় পর্যটকেরা হতাশ।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই সাদাপাথরে চলছে লাগামহীন লুটপাট। প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনেই সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের পাথর লুটে নেওয়া হয়। পরে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় কিছুদিন বন্ধ থাকলেও গত মাসের শেষ দিকে লুটপাট আরও বেড়ে যায়। ওই সময়ে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে বিপুল পাথর নেমে আসে। এরপর থেকে হাজারো শ্রমিক প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে পাথর লুট করে নিয়ে যায়। সোমবার পর্যন্ত এ লুটপাট চলে। গত এক সপ্তাহ লুটপাট চালিয়ে এলাকাটির প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে ফেলা হয়।
তবে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার পর মঙ্গলবার সাদাপাথরে গিয়ে পাথর তুলতে দেখা যায়নি কাউকে। যদিও গত ১৫ দিনেই সাদাপাথরকে একেবারে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সময়ে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। শুধু পাথর নয়, নদীর তীরের বালু ও মাটিও খুঁড়ে নেওয়া হয়েছে।
সাদাপাথর লুটের সঙ্গে প্রথম থেকেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের নাম উঠে এসেছে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করছেন। পাথর লুটের অভিযোগে সোমবার তার পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির আরও কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্টতার গুঞ্জন আছে।
Comments