অনিয়মের মাধ্যমে অর্জন করা বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি স্থগিত করলো ঢাবি

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের ডক্টরেট ডিগ্রি স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভর্তির যোগ্যতা পূরণ না করেও অনিয়মের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি অর্জন করার সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চতর তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নথিপত্র বলছে, জুলাইয়ের ২০ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের এক সভায় বেনজীরের ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তথ্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট বিস্তারিত পড়ে শোনান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
তথ্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, বেনজীর আহমেদের ভর্তি ফরমে নথির ক্রমিক নং ৫৪-এ নীল কালিতে ফরম পূরণ করা হয় কিন্তু তার শিক্ষাগত ডিগ্রি বিএ (পাস) ঘরে কালো কালিতে মোট নম্বর লিপিবদ্ধ করা হয়। অনুচিত সুবিধা নেওয়ার জন্য বেনজীর ফরমে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে তথ্যানুসন্ধান কমিটি।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, ডিবিএ রুলস অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্র্যাজুয়েটে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক কিন্তু বেনজীর আহমেদের সেই শর্ত পূরণ না হওয়ায় ভর্তির যোগ্যতা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে তথ্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে সিন্ডিকেট। এছাড়াও বেনজীর আহমেদ ভর্তির যোগ্যতা পূরণ না করে ডিবিএ ডিগ্রি অর্জনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর/ব্যক্তির দায় নিরূপণসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেট।
কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে আহ্বায়ক করা হয়। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম। তদন্ত কমিটিতে রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দিন আহম্মদকে সদস্য সচিব করা হয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বেনজীর আহমেদের ডিবিএ ডিগ্রি স্থগিত থাকবে। কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
বেনজীর আহমেদ ২০১৯ সালে ঢাবি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। এরপর থেকে তিনি নামের আগে ডক্টর শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেন। যদিও ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়ার প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাই তার ছিল না। ডিবিএতে ভর্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়। শিক্ষাজীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। যার কোনোটাই বেনজীরের ছিল না। তার ভর্তির ক্ষেত্রে মৌলিক শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছিল সুপারিশে। শর্ত শিথিল করে তাকে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছিলেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি ছিলেন বেনজীরের 'ডক্টরেট' প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক।
Comments