'কোটা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয় ছাত্রদল'

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীতে বিজয়ের স্রোত নামে। দুঃশাসন আর স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে শ্রাবণের স্নিগ্ধ বিকেলে নেমে আসে মুক্তির সুবাতাস। দীর্ঘ ৩৬ দিনে হাজারো প্রাণের বিসর্জন, অসংখ্য আহত এবং ১৬ বছরের নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা জনতার এক বিজয় মিছিল। স্বৈরাচার হটিয়ে এই বিজয় ছিনিয়ে আনার কারিগরদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সংগঠিত করতে জীবন বাজি রেখে রক্তাক্ত রাজপথকে আলিঙ্গন করেছিলেন গণতন্ত্রের পথের রাজনৈতিক শক্তিগুলো। এর অন্যতম জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যারা হাসিনার রক্ষচক্ষু ও মৃত্যুভয় উপক্ষা করে কোটা আন্দোলনকে রূপ দেয় স্বৈরাচার পতনের একদফায়।
কোটা আন্দোলনে যখন ঘৃণিত রাজাকারের তকমা লাগে, তখন বসে থাকেনি এই ছাত্রসংগঠনের কর্মীরাও। শত বাধার মুখেও শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে গণতন্ত্র হত্যাকারীকে প্রথমবারের মতো স্বৈরাচার নামে ডাকার দুর্দান্ত সাহস দেখান তারাও।
১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ আর চট্টগ্রামে ছাত্রদলের ওয়াসিম আকরাম পুলিশের গুলিতে নিহত হলে পতনের ঘণ্টা বাজে ফ্যাসিস্ট শাসনের। মোড় ঘুরে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। প্রাকাশ্যে মাঠে নামে রাজনৈতিক দলগুলো।
অতীত অভিজ্ঞতা আর নতুন নতুন কৌশলে আন্দোলনকে সফলতার দিকে টেনে নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। প্রায় দেড়হাজার শহীদের রক্তে ভেসে যায় সাড়ে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট তকমা পাওয়া শেখ হাসনিার মসনদ। জাতিকে মুক্ত করতে স্বৈরাচারের বুলেটে প্রাণ উৎসর্গ করেন ছাত্রদলের ১৪২ নেতাকর্মী।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, '১৯ জুলাই প্রথম কারফিউ জারি করা হয়েছিল। সেদিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমার নম্বরে কল দিয়ে বলেছিলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কারফিউ ভেঙে মিছিল করার সাহস দেখাতে হবে এবং আমরা সফল হলে সাধারণ জনগণও সাহস পাবে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান বলেন, 'আন্দোলনের সময় আমি আওয়াজ করে বলেছিলাম, যারা যুদ্ধের ময়দানে রয়েছেন, প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না। আমরা এই লড়াইয়ে জিতবো, কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আজকেই জিতবো। আমার এই কথার সাড়া দিয়েই তাৎক্ষণিক পাঁচজন শহীদ হন এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন। তাই আমি সবসময় ভাবি, শহীদদের প্রতি দায় আমার রয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকব ততোদিন এই দায়টা থাকবে।'
ঢাবির জিয়া হল শাখা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রিজভী আলম বলেন, 'শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের রাজাকার তকমা দেয়। ওইদিন আমি রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কি স্লোগান দিতে পারি। হঠাৎ মাথায় এলো শেখ হাসিনা যেহেতু একজন স্বৈরাচার, আমরা যদি রাজাকার হই তাহলে তুমি স্বৈরাচার। এই চিন্তা থেকে মেসেঞ্জার গ্রুপ করে স্বৈরাচার স্লোগানটা লিখে দিলাম।'
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, 'যখন আবু সাঈদ এবং ছাত্রদলের ওয়াসীম আকরামের শহীদ হওয়ার খবর পেলাম, তখন আমরা বললাম যেহেতু আজ থেকে রক্ত ঝরেছে ছাত্রদলের আপামর সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর মাঠে নামতে হবে। স্টেপ বাই স্টেপ যখনই এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ছাত্রদলের অভিভাবক তারেক রহমান সব ধরনের সহযোগিতা করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের নিজেদের কৌশল ও অভিজ্ঞতার আলোকে জুলাই অভ্যুত্থানে কাজে লাগিয়েছি। ৫ আগস্ট বিজয় উল্লাসের সময়ও যাত্রাবাড়ীতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।'
Comments