ইন্দো-প্যাসিফিকে স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশসহ ৫টি দেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: পল কাপুর

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটান ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মনোনীত এস পল কুমার। মঙ্গলবার (১০ জুন) ফরেন রিলেশন্স কমিটির শুনানির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনা, এ অঞ্চলে চীনের আধিপত্য, আফগানিস্তান সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, আমি জন্মেছি নয়াদিল্লিতে একজন ভারতীয় পিতা ও একজন আমেরিকান মাতার ঘরে। শৈশবে আমি প্রায়ই ভারত ভ্রমণ করতাম। তবে আমি বড় হয়েছি যুক্তরাষ্ট্রে একজন সম্পূর্ণ আমেরিকান শিশু হিসেবে। কখনো ভাবিনি আমার কর্মজীবন একদিন আমাকে জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, তার নিয়োগ নিশ্চিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই দেশগুলোর সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে কাজ করবেন। এর ফলে নিরাপত্তা জোরদার হবে। চীনের প্রভাবের পাল্টা ভারসাম্য তৈরি হবে এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণ ঘটবে।
পাকিস্তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এমন নিরাপত্তা সহযোগিতা অনুসরণ করব, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে সহায়ক হবে এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্ভাবনা খুঁজে দেখা হবে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়া একটি ভয়াবহ সংঘাত এড়িয়ে গেছে। এই সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, আমার নিয়োগ নিশ্চিত হলে আমি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা স্বার্থ বজায় রাখতে, শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রচারে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কাজ করে যাব। ওই শুনানিতে মনোনীত ব্যক্তিরা তাদের যার যার অবস্থান থেকে কমিটির কাছে তুলে ধরেন। এস পল কুমার তার বক্তব্যে আরও বলেন, আমি সম্মানের সাথে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে।
প্রেসিডেন্ট যে আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমাকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন, তার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আমার পরিবার ও বন্ধুদের অব্যাহত সমর্থনের জন্যও কৃতজ্ঞ। এদের অনেকেই এখানে আমার পেছনে বসে আছেন- আমার স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনজন। বাকিরা আত্মিকভাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন- আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়ে আমার এক ধরনের পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার অনুভূতি হচ্ছে। এরপরই তার জন্মস্থান নয়াদিল্লির প্রসঙ্গ টানেন।
তিনি বলেন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এসে আমি এই অঞ্চল নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি এবং দ্রুতই একজন গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এই অঞ্চল নিয়ে কাজ শুরু করি। একজন গবেষক হিসেবে আমি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিবেশ এবং এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ওপর বই ও প্রবন্ধ লিখেছি। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমি মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের এই অঞ্চল সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত সম্পর্ক বিষয়ক প্রকল্প পরিচালনা করেছি এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের পলিসি প্ল্যানিং স্টাফে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক দায়িত্বে ছিলাম। এখন যদি আমার নিয়োগ নিশ্চিত হয়, তাহলে আমি স্টেট ডিপার্টমেন্টের সেই বিভাগ পরিচালনা করব, যা বিশ্বের এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছে।
আজ এখানে এই কমিটির সামনে হাজির হয়ে মনে হচ্ছে আমি আমার শুরুতে ফিরে এসেছি। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অপার সম্ভাবনা বহন করে। সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে এই সম্পর্কগুলো বিকশিত হতে পারে এবং আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর লক্ষ্যমাত্রা- যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিরাপদ, আরও শক্তিশালী ও আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য- অর্জনে সহায়ক হতে পারে। এই অঞ্চলের সম্পর্ক এবং সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে আমি সংক্ষেপে বলতে চাই। আমি শুরু করি আমাদের ভারতের সঙ্গে অংশীদারিত্ব দিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বহু অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এর মধ্যে আছে মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করা, যাতে চীনের আধিপত্য না থাকে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও লাভজনকভাবে গড়ে তোলা। প্রযুক্তি শেয়ার ও উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেওয়া। আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় জ্বালানির প্রবাহ নিশ্চিত করা। যদি আমার নিয়োগ নিশ্চিত হয়, তাহলে আমি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে কাজ করব এবং আমাদের অংশীদারিত্বকে তার অপার সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নিয়ে যাব। পাকিস্তানে আমি এমন নিরাপত্তা সহযোগিতা অনুসরণ করব, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে সহায়ক এবং পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্ভাবনা খুঁজে দেখব।
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়া একটি ব্যয়বহুল সংঘাত এড়িয়ে গেছে, যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। আমার নিয়োগ নিশ্চিত হলে, আমি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা স্বার্থ বজায় রাখতে, শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রচারে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কাজ করে যাব। আফগানিস্তানে আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর নেতৃত্বে কাজ করব, যাতে আমাদের আটক থাকা মার্কিন নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা যায়। একইসঙ্গে আমি নিশ্চিত করব যে আফগানিস্তান আর কখনও যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে হুমকিস্বরূপ সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠতে না পারে। শেষে মধ্য এশিয়ার বিষয়ে বলি।
যুক্তরাষ্ট্র এখানে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা অগ্রসর করতে চায়- যেমন: কাজাখস্তান, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান। আমার নিয়োগ নিশ্চিত হলে আমি সি৫+১ প্রক্রিয়া এবং দ্বিপাক্ষিক কাঠামো ব্যবহার করব। জ্বালানি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই, এবং ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা করব। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় আমি যে সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরলাম, সেগুলো বাস্তবায়নে আমি পূর্ণ উদ্যমে কাজ করব, যাতে এগুলোর পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হয় এবং আমেরিকান জনগণের নিরাপত্তা, শক্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
Comments