শেয়ারবাজারে হতাশা, বাজেটেও নেই প্রত্যাশিত প্রণোদনা

দেশের শেয়ারবাজার বর্তমানে চরম এক মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা একরকম পিছু হটছেন। ক্রমাগত লোকসানে ক্ষতবিক্ষত হয়ে অনেকেই শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এখন পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। এর সঙ্গে কমে গেছে দৈনিক লেনদেনও, যা এখন আশঙ্কাজনকভাবে নিম্নমুখী।
গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজারে কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বাজেটকে ঘিরে নতুন করে কিছু আশা জেগেছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তাঁরা ভেবেছিলেন, বাজেটে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্রণোদনা আসবে, যা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়ক হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঘোষিত বাজেট বিনিয়োগকারীদের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট প্রস্তাবনায় শেয়ারবাজারে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কিছু সুবিধা থাকলেও, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কার্যকর ও প্রত্যক্ষ কোনো প্রণোদনা রাখা হয়নি।
বাজেটে শেয়ারবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট করহারে ব্যবধান সৃষ্টি। শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ শতাংশ, আর তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির জন্য তা সাড়ে ২৭ শতাংশ। যদিও শর্ত পূরণ করলে কর ব্যবধান কমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে ব্যবধান ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিল, তা আমলে নেওয়া হয়নি।
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর জন্য কিছুটা স্বস্তি এসেছে লেনদেন কর হ্রাসে। ১০০ টাকার লেনদেনে কর বর্তমানে ৫ পয়সা, তা কমিয়ে ৩ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে সাড়ে ২৭ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ সবকিছুই প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল—লভ্যাংশ ও মূলধনি মুনাফার ওপর কর হ্রাসের মতো সিদ্ধান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হবে, যা হয়নি।
কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে হবে। কিন্তু মাত্র ৫ শতাংশ কর ছাড়ে কতটা কোম্পানি আগ্রহ দেখাবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ, তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর ওপর নানা নিয়ম-কানুনের বোঝা পড়ে এবং বাড়তি খরচও যুক্ত হয়। তাই বাস্তবিক অর্থে কার্যকর ও আকর্ষণীয় প্রণোদনা ছাড়া বাজারে নতুন কোম্পানি আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
গত বছর আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় বাজার সংস্কারের বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও, বাস্তবায়নে গতি নেই বললেই চলে। এতে করে বাজারে সেই সংস্কারের সুফলও দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু, সামগ্রিক মন্দা এবং প্রণোদনা-শূন্য বাজেট বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
Comments