পুরুষদের জন্যই প্রথমে বানানো হয়েছিল হাই হিল!

আধুনিক নারীদের ফ্যাশনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হাই হিল। হাই হিল মানেই যেন রেড কার্পেট, হাই ফ্যাশন বা গ্ল্যামারের প্রতীক। কিন্তু ইতিহাস বলছে ভিন্ন গল্প। হাই হিল একসময় ছিল পুরুষদের জন্য তৈরি জুতা।তাও আবার রাজা-বাদশাহ থেকে শুরু করে ঘোড়সওয়ারদের ব্যবহারিক দরকারে।
১৫শ শতকের পারস্যে হাই হিলের সূচনা। পার্সিয়ান ঘোড়সওয়াররা হিল পরতেন যেন স্টিরাপে পা শক্তভাবে আটকে থাকে।যুদ্ধের ময়দানে তা দিত বাড়তি সুবিধা।সাজগোজের জন্য নয়, বরং যুদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ছিল সেই হিলের প্রয়োজন।
পারস্যের সাংস্কৃতিক প্রভাব যখন ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ইউরোপীয় অভিজাত পুরুষরাও হিল পরা শুরু করেন। কারণ ছিল একটাই। নিজেকে আরও লম্বা, ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী দেখানো। হিল হয়ে ওঠে উচ্চবিত্তদের স্ট্যাটাস প্রতীক।
নারীরাও পিছিয়ে ছিলেন না। রেনেসাঁ যুগে ইতালির ভেনিসে অভিজাত নারীরা পরতেন 'চোপিন' নামের বিশাল উঁচু প্ল্যাটফর্ম হিল। এতটাই উঁচু যে হাঁটতে হলে পাশে রাখতে হতো দাসী বা সহকারী, শুধুমাত্র তাদের ব্যালেন্স ধরে রাখার জন্য।
তবে হাই হিলের ইতিহাসে সবচেয়ে নাটকীয় মোড় আসে ফ্রান্সে, ১৭শ শতকে। রাজা লুই চতুর্দশ হিলকে রীতিমতো রাজকীয় পরিচয়ের প্রতীক বানিয়ে ফেলেন। তিনি পরতেন লাল সোলের হিল। সেই সাথে তিনি সবাইকে জানিয়ে দেন, এই ধরনের হিল কেবল রাজপরিবারের সদস্যরাই পরতে পারবেন। এই লাল সোলই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে ফ্যাশনের আইকন। যার অনুপ্রেরণায় তৈরি হয় আজকের 'ক্রিশ্চিয়ান লুবুতাঁ' ব্র্যান্ডের বিশ্বখ্যাত হাই হিল।
হাই হিলের এই যাত্রা কেবল ফ্যাশনের নয়। এ যেন সমাজ, রাজনীতি ও পরিচয়ের ইতিহাস। যুদ্ধের ময়দান থেকে রাজপ্রাসাদ, সেখান থেকে ফ্যাশন শো আর রূপকথার রাজকন্যার পায়ে। এক কথায় বলা যায়, হিলের পথচলা বেশ রোমাঞ্চকর ও বৈচিত্র্যময়।
তাই যখন আপনি হাই হিল পরেন, শুধু সৌন্দর্য নয়, ভাবুন তার সেই ঐতিহাসিক শিকড়ের কথা। হাই হিল যেন একজোড়া জুতার মধ্যেই লুকিয়ে থাকা শত শত বছরের গল্প।
Comments