ঢাকার বায়ু মান বিপজ্জনক, করণীয় কী?
আজ (সোমবার) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার জানিয়েছে বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ২৬৬ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। একই সময়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ২৫২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া ২২০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, ২১১ স্কোর নিয়ে পরের অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা নেপালের কাঠমান্ডুর স্কোর ২০৮।
ঢাকার বায়ু খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। চরম অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়েই জীবন কাটাচ্ছে রাজধানীর মানুষ। এখন জন্ম নেওয়া শিশুটিও পৃথিবীতে এসেই দূষিত বা অস্বাস্থ্যকর বায়ু সেবন করছে।
আমাদের দেশে পরিবেশ দুষণ বেড়েই চলেছে। শীত এলে বড় শহরগুলোতে বিশেষ করে ঢাকায় বাতাসের গুণগত মানের অবনতি হয়। ঢাকার অনেক সঙ্কটের এক ভয়ঙ্কর সঙ্কট হয়ে দেখা দিচ্ছে বায়ুদূষণ। বাতাসের মানের মূল্যায়ন ফল ভীতিপ্রদ হয়ে উঠছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মান কাজ চলে বছর জুড়ে। খোড়াখুঁড়ির কাজ চলতে থাকে সারা বছর। খোড়াখুঁড়ির কারণে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা নেওয়া হয় না বলেই দুষণ বাড়ে।
সাধারণত শীতের মৌসুমে গড় বায়ুমান সূচক বাড়তে থাকে। জুন ও জুলাইয়ে বায়ু দূষণ কমে আসে বৃষ্টির কারণে। শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক ঋতু হওয়ায় এই সময়ে ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়৷ এর সঙ্গে ইটের ভাটা ও সিমেন্ট কারখানা থেকে উৎপন্ন ধুলার মিশ্রণ ঘটলে বায়ু দূষণ বাড়ে৷ শীতে আর্দ্রতা কম থাকায় এই সময়ে বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণাগুলোর উপস্থিতিও বেড়ে যায় ঢাকার বায়ুমণ্ডলে এমন বিপজ্জনক মিশ্রণ যোগ করার পেছনে আরও কারণের মধ্যে রয়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে নিষ্কাশিত দূষিত গ্যাস ও কেমিক্যাল ও অনুপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এতে রাজধানীবাসীর মধ্যে শ্বাসতন্ত্র ও হৃদরোগে আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা, যেখানে সবচাইতে বেশি ভুগছে শিশু ও প্রবীণসহ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা মানুষ।
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছুলেও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা আশা জাগায় না। মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন থাকতে হবে ঠিকই, তবে সরকারের করণীয় আছে অনেক কিছু। গাছ-গাছালির সমন্বয়ে প্রাকৃতিক বায়ু পরিশোধক হিসেবে কাজ করে এমন সবুজ পরিসর নির্মাণ করা প্রয়োজন। খোলামেলা বর্জ্য পোড়ানো এবং অতিরিক্ত ল্যান্ডফিল আবর্জনার ক্ষতিকারক পরিণতি হ্রাস করার ক্ষেত্রে, রিসাইকেল প্রকল্প নিতে সরকারি বেসরকারি খাতে উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার বায়ুমানের এমন আশঙ্কাজনক হ্রাস মোকাবিলায় যথেষ্ট মনোযোগসহ একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।