ভোটের লড়াই শুরু, বিশ্ববাসীর নজর আমেরিকার দিকে
সারা বিশ্বের চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন দেশটির ভোটাররা। কথা ছিল ২০২০ সালের নির্বাচনের মতই হবে এবারের লড়াই। কিন্তু গত জুলাইয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে গেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধের দাঁড় করায় ডেমোক্রেটরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তা যাচাইয়ে নিয়মিত জনমত জরিপ হয়। এবারও এসব জরিপে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। আবার কোন কোন জরিপে ট্রাম্প এগিয়ে। ২০১৬ সালে যখন ট্যাম্প নির্বাচনী লড়াই করছিলেন তখন সব জরিপেই তখনকার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিজয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প।
এবার যেই জিতুক, নির্বাচনী লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে সে কথা জরিপেই বলা হচ্ছে। তবে জনমত যেমনই হোক আমেরিকার নির্বাচনের আসল ফ্যাক্টর 'ইলেক্টোরাল কলেজ' পদ্ধতি। দেশটির ৫০টি প্রদেশ মিলিয়ে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন। ক্ষমতা দখল করতে প্রয়োজন ২৭০টি ভোট। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, জনগণের ভোট বেশি পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের কাছে শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনও প্রার্থীকে। ২০০০ ও ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ ভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, যথাক্রমে অ্যাল গোর এবং হিলারি ক্লিন্টন।
একজন প্রার্থী যে প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিজের দিকে টানতে পারবেন, সেই প্রদেশের সব ক'টি ভোট তার হয়ে যাবে। অর্থাৎ কোন একটি প্রদেশে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি সেই প্রদেশের সব কটি ইলেক্টরকে জিতে নেবেন। বলা হচ্ছে আবারও এই পদ্ধতির সুবিধা পেতে পারেন ট্রাম্প যেমনটা পেয়েছিলেন ২০১৬ সালে। সেবার জনগণের ভোটের নিরিখে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন পেয়েছিলেন ৪৮.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬.১ শতাংশ ভোট। ট্রাম্পের থেকে ২.১ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাভুটিতে হেরে যান হিলারি। তিনি পেয়েছিলেন ২২৭টি ইলেক্টোরাল ভোট, কিন্তু ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৪টি ভোট।
এবারের পরিস্থিতিও অনেকটা এমন বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। নেভাদা, অ্যারিজোনা,মিনেসোটা,পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন— এই সুইং প্রদেশগুলিই ঠিক করবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ফিরছেন কি না।
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। এবারের ভোট বিশ্ব রাজনীতিতে বড় প্রভাব রাখবে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-হামাস-হেজবুল্লাহ-ইরান এবং চীন-তাইওয়ান সংঘাতের অনেক সমীকরণের নতুন মেরুকরণ হবে এবারের ফলাফলে। এই নির্বাচনের দিকে গভীর দৃষ্টি রাখছে চীন। কারণ গত কয়েক বছরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিং-এর সম্পর্ক প্রায় তলানীতে নিয়ে গেছেন জো বাইডেন।
খোদ আমেরিকানরাও এই নির্বাচনে এবার অনেক বেশি সক্রিয়। কারণ দেশটির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন। আগামী চার বছর আমেরিকার নিজের অভ্যন্তরীণ নীতিসহ বিশ্ব রাজনীতিতে কার প্রভাব থাকবে তার জন্য অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টা।