হার্ট অ্যাটাকের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, প্রাথমিক অবস্থায় যা করবেন

হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক তখনই ঘটে যখন হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে হৃদযন্ত্রের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলা হয়। হার্ট অ্যাটাক যে কোনো সময়, যে কারও হতে পারে। এটি অনেক সময় হঠাৎ করে হয়, আবার ধীরে ধীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। তবে অনেকেই প্রাথমিক লক্ষণগুলো চেনেন না বা অবহেলা করেন, যা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। হৃদরোগের লক্ষণগুলো সময়মতো শনাক্ত করা এবং দ্রুত চিকিৎসা নেয়া জীবন বাঁচাতে পারে। তাই হৃদরোগের সাধারণ ও ব্যতিক্রমী লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। যদি নিজের বা আশপাশের কারও মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
হার্ট অ্যাটাকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষণ: আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে হার্ট অ্যাটাকের কয়েকটি লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো:
বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি
হৃদরোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো বুকের মাঝখানে অস্বস্তি বা ব্যথা। এটি কয়েক মিনিট ধরে থাকতে পারে বা মাঝেমধ্যে চলে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে। বুকের ব্যথা হতে পারে—
- চেপে ধরা অনুভূতি
- ভারী বা সংকোচনের মতো লাগা
- ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
শরীরের অন্যান্য অংশে অস্বস্তি
হৃদরোগের ক্ষেত্রে বুক ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে, যেমন—
- দুই বাহু (একটি বা উভয়ই)
- পিঠ
- গলা বা চোয়াল
- পেটের উপরের অংশ
শ্বাসকষ্ট:
- বুকের ব্যথার সঙ্গে বা ছাড়াও শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যা হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ।
অন্যান্য লক্ষণ
- অতিরিক্ত ঘাম
- বমি বা বমি ভাব
- হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত বা দ্রুত হওয়া
- অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি
- মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম ভাব
নারীদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ব্যতিক্রমী লক্ষণ
পুরুষদের মতো নারীদের ক্ষেত্রেও বুকের ব্যথা হতে পারে হৃদরোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অনেক সময় নারীদের হৃদরোগের লক্ষণগুলো কিছুটা ভিন্ন হয়, যেমন—
- উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা
- শ্বাসকষ্ট
- পিঠ, কাঁধ বা বাহুতে ব্যথা
- বমি বা পেটের সমস্যা
- অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি
হৃদরোগের সময় প্রাথমিক চিকিৎসা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিক মৃত্যু হয়। সে কারণেই হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। তবে হাসপাতালে যাওয়ার আগের সময়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপ্যাটেল যাওইয়ার আগ পর্যন্ত তাই কিছু পদক্ষেপ নিতে বলেন চিকিৎসকরা। মায়ো ক্লিনের এক প্রতিবেদনে সে বিষয় উঠে এসেছে। যদি মনে হয় কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছে, তাহলে নিচের পদক্ষেপগুলো নিন—
অ্যাসপিরিন: যদি চিকিৎসক রোগীকে আগে অ্যাসপিরিন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে এটি খেতে দিন। এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করবেন না।
নাইট্রোগ্লিসারিন গ্রহণ: যদি আগে থেকে চিকিৎসক আপনাকে এই ওষুধটি দিয়ে থাকেন, তাহলে নির্ধারিত মাত্রায় গ্রহণ করুন।
সিপিআর শুরু করুন: যদি আক্রান্ত ব্যক্তি নিঃশ্বাস না নেন বা হৃদস্পন্দন অনুভূত না হয়, তাহলে সিপিআর দিতে হবে। আপনার যদি প্রশিক্ষণ না নিয়ে থাকে, তাহলে শুধু বুক চেপে ধরুন এবং প্রতি মিনিটে ১০০-১২০ বার চাপ দিন।
হৃদরোগ প্রতিরোধের উপায়: জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে—
- ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার বন্ধ করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- সুস্থ ওজন বজায় রাখুন।
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: কম লবণ ও কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খান।
- অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করুন।
- স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করুন।
- রক্তচাপ, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম
হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। অনেক সময় এটি হঠাৎ শুরু হয়, আবার অনেক সময় লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তাই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
Comments