সুস্থ থাকতে কোন বয়সী মানুষের কত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত
সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা জানি না কত ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। দেখা যায় অনেকে একেবারেই ঘুম হয় না আর কেউ সারাদিন ঘুমিয়ে কাটান। শুনতে অবাক লাগলেও ঘুমের সঙ্গে বয়সের বয়সের সম্পর্ক রয়েছে। বয়স অনুযায়ী ঘুমের আদর্শ ঘণ্টা নির্ধারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। ঠিক মত না ঘুমালে নানা রোগে ভুগতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, বিষণ্নতা, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্রের একদল তাদের গবেষণায় তুলে ধরেছেন বয়সভেদে মানুষকে কত সময় ঘুমাতে হবে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন এবং দ্য স্লিপ রিসার্চ সোসাইটির মতে বেশিরভাগ মানুষ পর্যাপ্ত ঘুমায় না। তাদের সুস্থ থাকতে বয়স অনুসারে ঘুমানো উচিত। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
বয়স অনুযায়ী কত ঘণ্টা ঘুমাবেন: মানুষের জীবনযাত্রা এবং কাজের ধরনে বদল আসে তাদের বয়স এবং জীবনের তাগিদেই। একজন স্কুলগামী ছাত্র এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির সারাদিনের কাজের ধরণ এক নয়। দুজন দুই ধরনের ব্যস্তায় থাকেন। ঠিক এই কারণেই গবেষকরা বয়সভেদে ঘুমের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। এবারে জেনে নিন কোন বয়সে কতক্ষণ ঘুমাতে হবে।
নবজাতক: জন্মের পর নবজাতক বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে ০ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত শিশুদের প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কখনো শিশুরা এর বেশিও ঘুমায় সেটা সমস্যার কারণ নয়।
৪ থেকে ১১ মাস: এই বয়সে শিশুদের বিভিন্ন বিকাশ পায়, তাই ঘুমের বিষয়টার দিকে পরিবারের সচেতন থাকতে হবে। চার থেকে এগারো মাস বয়সে শিশুদের ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
১ থেকে ২ বছর: শিশুদের চঞ্চলতা এবং কাজের ধরনে বেশ পরিবর্তন আসে বয়স এক হলেই। ১ বছর থেকে ২ বছরের শিশুদের ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩ থেকে ৫ বছর: এই বয়সে শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করে। তারা বিভিন্ন বিষয় জিনিস শিখতে থাকে। বিভিন্ন খেলা নিয়েও ব্যস্ত থাকে। এই সময়ে শিশুদের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
৬ থেকে ১২ বছর: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা ৬ বছর থেকে স্কুলে যায়। ক্লাস, পড়াশোনা, খেলাধুলা সব মিলিয়ে তাদের অনেক ব্যস্ততা থাকে। তাই পর্যাপ্ত না ঘুমালে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। ৬ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
১৩ থেকে ১৮ বছর: এই সময়ে টিনেজারদের জীবনে নানান পরিবর্তন আসে। তারা বিভিন্ন নতুন অ্যাক্টিভিটির সং যুক্ত হয়। নতুন শখ কিংবা প্যাশন খুঁজে বের করে। তাদের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন আসে। তাই এই বয়সে তাদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টাতে হবে, নয়তো ঘুমালে কাজে মনোযোগের সমস্যা হতে পারে সেই সঙ্গে ক্লান্তি বোধ হবে।
১৮ থেকে ৬০ বছর: মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে ১৮ বছর থেকেই। এই বয়স থেকে সবকিছু যেন দ্রুত বদলে যেতে থাকে। তাই ১৮ থেকে ৬০ বছরের সময়ে ঘুমের বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন এই সময়ে নতুন দায়িত্ব, চাকরি কিংবা ব্যবসার পাশাপাশি পরিবারের দেখাশোনাও করতে হয়। সবমিলিয়ে সারাদিন ব্যস্ততায় কাটাতে হয়। তবে নিজেকে সুস্থ রাখতে ঘুমের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে তাই বিশেষজ্ঞরা ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
৬১ বছর এবং তার বেশি: জীবনের এই পর্যায়ে এসে কাজের থেকে বেশি অবসর। নানা রোগে ভুগতে হয়। নিজেকে সুস্থ রাখতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। বয়সের সঙ্গে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। সে কারণে বয়স্ক হলে সব দিকে খেয়াল রাখতে হবে ঘুম নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না।