নারী বেকারত্ব দূরীকরণে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর উদ্যোগ নারী বেকারত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি করেছে। তিনি শুধুমাত্র নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করেননি, বরং তিনি দেশের নারী সমাজের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। তাঁর এই কর্মকাণ্ড আজকের দিনে বাংলাদেশের নারী সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এবং তাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
দেশের নারী জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আজও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, যাঁরা সাধারণত গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করেন। পুরুষদের তুলনায় নারীদের জন্য সুযোগের অভাব এবং সামাজিক বাধাবিঘ্ন অনেক বেশি। তবে, কিছু উদ্যোক্তা এই সমস্যার সমাধানে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন, এবং তাঁদের কর্মকাণ্ড নারী বেকারত্বের মোকাবিলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশে নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উন্নয়নে যার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং সমাজসেবী। তিনি তার জীবনব্যাপী কাজের মাধ্যমে নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারী উন্নয়ন এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় ৯০ এর দশকে এপেক্স ফুটওয়্যার কারখানা স্থাপন করে তিনি একটি বিশাল শিল্প বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু তার অবদান কেবল শিল্প প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি নারীদের জন্য এক নতুন কর্মজগৎ তৈরি করেন, যা তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং আত্মনির্ভরশীল করে তোলে।
নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রাথমিক উদ্যোগ: ১৯৮০-৯০ দশকে বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে নারী কর্মসংস্থান প্রায় ছিল না। কালিয়াকৈরের হরিণহাটি এলাকার মতো অনেক অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিলো শোচনীয় এবং পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ ছিলো না। এই অঞ্চলের নারীদের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ ছিলো অপ্রতুল, এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা পুরুষদের তুলনায় নানাবিধ সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতেন। কিন্তু সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নারীদের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছিলেন।
৯০ এর দশকে দিকে এপেক্স গ্রুপের অধীনে জুতা উৎপাদনকারী একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে সল্পশিক্ষিত গ্রামীণ নারীদের এই কারখানায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী নারীদের জন্য সৃজনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন, যা শুধু নারী কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত না , বরং তাদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেন এবং নিজেদের পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন।
প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মনোবল: সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী শুধুমাত্র নারীদের চাকরি দেননি, তিনি তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পেশাগত উন্নতির জন্যও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করেছিলেন। জুতা উৎপাদনের কারখানায় নারীদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেখানে তারা জুতা তৈরির প্রক্রিয়া শিখে থাকে। কিন্তু প্রশিক্ষণের বিষয়টি ছিল একেবারেই মৌলিক, কেননা এই নারীরা সাধারণত গ্রামের অল্প শিক্ষিত বেকার নারী ছিলেন। তবে, মঞ্জুর এলাহী নারীদের পেশাগত উন্নয়ন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেন । তিনি তার ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশনা প্রদান করতেন, যার মাধ্যমে তাদের কাজের প্রতি আনুগত্য ও দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
এপেক্স গ্রুপের কারখানায় নিয়োগ পাওয়া নারীরা শুধু কাজের মাধ্যমে নিজেদের আয়ের সুযোগ পেতেন না, বরং তারা এক নতুন জীবনের পথ দেখতে শুরু করতেন। এই নারীদের অনেকেই তখন ঢাকার হাজারীবাগে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতেন এবং পরে তাদের নিজেদের পরিবারে নিয়ে এসে অন্য নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। এটি ছিল নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যা তাদের একদিক থেকে স্বাবলম্বী এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলে ।
গ্রামীণ নারীর আত্মকর্মসংস্থান: গ্রামীন নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এক যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। কারখানায় এসে কাজ করা অনেক নারীর পক্ষেই সম্ভব ছিল না বিশেষত যারা সংসারের দায়িত্ব পালন করতেন, যাদের সন্তান বা অসুস্থ পরিবারের সদস্যদের দেখভাল করতে হতো, কিংবা যাদের পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। এসব নারী যেন ঘরে বসেই কাজের সুযোগ পান, সেজন্য তিনি এমন একটি কর্মপদ্ধতি চালু করেন, যেখানে জুতা তৈরির বিভিন্ন অংশ সেলাই বা নকশার কাজ তাদের বাড়িতে বসে করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এই কর্মসূচির আওতায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছে দেওয়া হতো, এবং তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে সরবরাহ করতেন। কাজের পরিমাণ, দক্ষতা ও সময়ের ভিত্তিতে তাদের উপযুক্ত মজুরি প্রদান করা হতো, যাতে তারা ঘরে বসেই সম্মানজনক উপার্জন করতে পারেন। এটি শুধু একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল না, বরং নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলতে সাহায্য করেছে।
কালিয়াকৈর অঞ্চলের এই উদ্যোগ ব্যাপক প্রসার লাভ করে, এবং ধীরে ধীরে আশেপাশের উপজেলারর গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের অনেক নারী, যারা আগে কোনো আয়মূলক কাজে যুক্ত ছিলেন না, তারা এই সুযোগের মাধ্যমে নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পান। বিশেষ করে গৃহিণীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেন। স্বামী-পরিত্যক্তা, বিধবা, প্রতিবন্ধী নারী এবং বৃদ্ধারাও এই কাজের মাধ্যমে একটি স্থায়ী আয়ের উৎস খুঁজে পান। এতে তাদের জীবনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয় এবং তারা পরিবার ও সমাজের বোঝা না হয়ে বরং একজন আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।
এই কর্মসূচির ফলে গ্রামীণ নারীরা শুধু অর্থনৈতিক মুক্তিই পাননি, বরং তাদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যারা পরিবারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তারা নিজে উপার্জন করতে পারায় তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়। তারা নিজেদের অর্থ নিজের মতো করে ব্যয় করতে পারেন, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, এটি নারীশিক্ষার প্রসারেও ভূমিকা রেখেছে, কারণ মায়েরা যখন অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হন, তখন তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্যও বিনিয়োগ করতে পারেন।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর এই উদ্যোগ শুধু একটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ছিল না; এটি ছিল একটি মানবিক পদক্ষেপ, যা দেশের হাজার হাজার বেকার নারীকে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তার এই প্রয়াসের ফলে বহু দরিদ্র পরিবার দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছে, এবং নারীরা স্বনির্ভর হয়ে নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছেন। এটি শুধুমাত্র একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছিল না, বরং এটি ছিল নারীর ক্ষমতায়নের একটি সফল দৃষ্টান্ত, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
নারীদের সামাজিক অবস্থান ও পরিবারের উপর প্রভাব: এপেক্স গ্রুপের কারখানায় কর্মরত নারীরা, যারা আগে শুধুমাত্র বেকার বা কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিলেন, এখন নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করছে। কাজের মাধ্যমে তারা নিজেদের পরিবারের জন্য খাদ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম হন। তাদের পারিবারিক জীবনেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে, কারণ তারা আর্থিকভাবে নির্ভরশীল না হয়ে পরিবারের পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী যে কম পদ্ধতি তৈরি করে রেখে গেছেন , তার ফলে আজ হাজার হাজার কমহীন নারীরা কেবল নিজের জীবন গঠন করতেন না, বরং তারা নিজেদের পরিবার, সমাজে এবং তাদের সম্প্রদায়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হচ্ছে। অনেকেই তাদের পরিবারের অভাব-অনটন দূর করে নিজেরাই বাড়ি ঘর ও সংসার সাজাতে সক্ষম হচ্ছে , সন্তানদের ভালোভাবে শিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত সম্মানিত জীবন যাপন করতে পারছে।
নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও সমৃদ্ধি: সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী শুধু নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেই থেমে থাকেননি, তিনি নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। নারীরা যখন তার কারখানার প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, তখন তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বিকাশ ঘটে। এই প্রশিক্ষণ তাদের হাতে বিশেষ দক্ষতা এনে দেয়, যার মাধ্যমে তারা শুধু একটি চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, বরং নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পান। অনেক নারী, যারা প্রথমে কারখানায় কাজ করতেন, পরবর্তীতে ছোট আকারে জুতা বা চামড়া জাতীয় পণ্য তৈরি করে তাদের নিজের ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে।
এটি কেবল তাদের নিজস্ব জীবনকে উন্নত করতে সাহায্য করেছে, সমাজের আরও অনেক নারীর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই উদ্যোগের ফলে নারীরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রেরণা পেয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে একটি উদ্যোক্তা মনোভাব তৈরি হয়েছে।
নারী উদ্যোক্তারা তাঁদের নতুন উদ্যোগে সফলতা অর্জন করতে সক্ষমতা পাচ্ছে , যা তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। তারা নিজস্ব পণ্য বাজারে নিয়ে আসতে শুরু করেছে এবং আজ নারীরা সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্মান পাচ্ছে। এই নারী উদ্যোক্তারা দেশজুড়ে তাঁদের সৃজনশীলতা ও মেধার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছে।
প্রতিযোগিতা এবং উত্সাহ: এপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী কর্মক্ষেত্রে নারীদের উদ্দীপনা ও উৎসাহ বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল নিয়মিতভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এই প্রতিযোগিতাগুলির মাধ্যমে নারীদের মধ্যে এক ধরনের গঠনমূলক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতো, যা তাদের কাজের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী করে তুলত। নারীদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং পরিশ্রমের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হতো, যা তাদের আরও উদ্যমী করে তুলত। সেই সঙ্গে, যারা তাদের কাজের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতেন, তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে উৎসাহিত করা হতো। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী নিজে এগিয়ে এসে তাঁদের কাজের প্রশংসা করতেন, এবং তাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ রাখতে উৎসাহিত করতেন।
এছাড়া, যারা পিছিয়ে পড়তেন বা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়তেন, তাদের সঙ্গে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতেন। তিনি বুঝতেন যে, কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মীদের মাঝে মনোবল ও আত্মবিশ্বাস থাকা অত্যন্ত জরুরি, তাই তিনি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ এবং সহায়তা দিতেন, যাতে তারা তাদের কাজের প্রতি মনোযোগী থাকতে পারে। এমনকি, যারা নিজেদের সক্ষমতার দিক থেকে কম আত্মবিশ্বাসী ছিল, তাদেরকে সাহস জোগাতে সাহায্য করতেন, এবং কর্মের ক্ষেত্রে তাদের আরো মনোযোগী ও দক্ষ হতে সহযোগিতা করতেন।
এভাবে, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী শুধু নারীদের মাঝে প্রতিযোগিতা ও উদ্দীপনা তৈরি করতেন না, বরং তারা যাতে আত্মবিশ্বাসী এবং উন্নততর হয়ে ওঠে, তার জন্য এক ধরনের মানবিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করতেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্যোগ কর্মক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
শ্রমিকবান্ধব : সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ছিলেন একজন প্রকৃত শ্রমিকবান্ধব উদ্যোক্তা, যিনি কখনোই কারখানায় বসে সময় নষ্ট করতেন না। তিনি সবসময় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতেন, তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতেন। তিনি প্রায়ই শ্রমিকদের বলতেন, "আমি আপনাদের আমার পরিবারের সদস্য মনে করি," যা তার আন্তরিকতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
তিনি কেবল একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন না, বরং একজন অভিভাবকের মতো শ্রমিকদের ভালো-মন্দের খোঁজখবর নিতেন। তাদের প্রয়োজন, সমস্যা এবং চাহিদাগুলো সরাসরি শুনতেন এবং যথাযথ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করতেন। শ্রমিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল পারিবারিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ, যা কর্মক্ষেত্রে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
বিপ্লবী সমাজিক পরিবর্তন: সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর উদ্যোগ কেবল একটি শিল্প প্রতিষ্ঠা বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি পুরো সমাজে এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছিল। নারীরা যে শুধু সংসারের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এমন ধারণা বদলানো শুরু হয়েছিল। তারা নিজেদের কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে একটি নতুন অবস্থান তৈরি করেছিল, যেখানে তারা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন।
Comments