দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও এসিসিএফ ব্যাংকের ম্যানেজার
নীলফামারীতে আজিজ কো-অপারেটিভ কর্মাস এন্ড ফাইন্যান্স (এসিসিএফ) ব্যাংক লিমিটেড এর পাঁচশতাধিক গ্রাহকের জমাকৃত আমানতের দেড় কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান শাহ্ ফকির জাহিদ।
বিষয়টি জানাজানির পর গত এক বছর থেকে গ্রাহকরা ব্যাংকে এসে টাকা ফেরতের দাবি জানালে ম্যানেজার তাদের টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন। কিন্ত গত ৫ আগষ্ট থেকে ব্যাংকের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন ওই ম্যানেজার। তার বাড়ী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামে, সে জাকির হোসেন শাহ'র ছেলে।
ব্যাংকটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও মুল কার্যক্রম চালু হয় ২০১৮ সালে। তিনি ২০১৮ সাল থেকে ম্যানেজার হিসেবে ওই ব্যাংকে কর্মরত আছেন। ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকটি জেলা শহরের কিচেন মার্কেট বড় বাজার এলাকার সাব্বির ভিলার দ্ধিতীয় তলায় অবস্থিত।
গ্রাহকরা জানায়, ২০১৮ সালে জুলাই মাসে শহরের কিচেন মার্কেটস্থ এলাকায় ব্যাংকের কার্যক্রম চালু করেন আলতাফ হোসেনসহ জাহিদুজ্জামান। তিনি ছয়জন কর্মচারী নিয়ে প্রায় ছয় বছর যাবৎ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে এসিসিএফ এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় পাঁচশতাধিক। ব্যাংকটি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় বড় বড় ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ কৃষি শ্রমিকরাও তাদের পরিশ্রমের টাকা সেখানে জমা রাখতো।
সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের আব্দুল মজিদের ছেলে গ্রাহক শামিম মিয়া জানায়, আমরা তিন ভাই মিলে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা রাখি। চুক্তি অনুযায়ী লাখে ১০০০ হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ প্রতিমাসে দেওয়ার কথা। এখন লাভতো দূরের কথা আসল টাকাই পাচ্ছিনা। সেই টাকার জন্য ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায় আজ দিব কাল দিব বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। এসে দেখি ব্যাংক বন্ধ। এছাড়াও, শওকত আলীর ৩ লাখ, ওয়াজেদ আলী ৪লাখ, সুরত আলী ৭ লাখ, আমিনুর রহমান ৩ লাখ, আরব আলী শাহ এক লাখ ৮০ হাজার, আব্দুল মজিদ সাড়ে ৫ লাখ, নূরুজ্জামান বাবলু ৪ লাখ ও জহুরুল ইসলামের ৬০ হাজার টাকাসহ একাধিক গ্রাহকের টাকা নিয়ে জাহিদ এখন উধাও।
কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী মাসুদ আলম জানায়, মেয়ের বিয়ের জন্য ওই শাখায় টাকা জমাতে থাকি। সেখানে আমার নামে এক লাখ ২৬ হাজার, মেয়ের নামে এক লাখ ৫০ হাজার, স্ত্রীর নামে এক লাখসহ মোট তিন লাখ ৭৬ হাজার টাকা জমা রাখি। ছল ছল চোখে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমাকে 'কবর' দিয়েছে বাবা। মেয়েটার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। এখন কোন উপায় দেখছি না কি করবো। এদের আমি বিচার চাই।
শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শাখার একজন কর্মচারি জানায়, বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ম্যানেজার নিজের কাজে রাখতেন। গ্রাহকরা এবিষয় কিছুই জানতো না। এরপর ব্যাংকের কয়েকজন গ্রাহক সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা তুলতে এসে দেখেন তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। এতে ম্যানেজারের প্রতারণার বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে শতাধিক গ্রাহক টাকা ফেরত নিতে এসে দেখেন ব্যাংক বন্ধ।
কানিজ ফাতেমা নামের এক ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, 'নিজের ভবিষ্যতের জন্য ওই ব্যাংকে দুই লাখ টাকা রেখেছিলাম। গত পাঁচ আগষ্টের আগে সাংসারিক প্রয়োজনে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি গেটে তালা ঝুলছে। এই বিচার কাকে দিবো। আমারটা টাকা উদ্ধারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।
ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদুজ্জামান শাহ ফকিরকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তা রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।