ওয়াইজ স্টারের সাথে রিং শাইনের শেয়ার কেনার চুক্তি বাতিল
বস্ত্রখাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের সাথে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলসের শেয়ার বিক্রির যে চুক্তি হয়েছিল তা বাতিল হয়েছে। গত রোববার কোম্পানির ১০৫ তম পর্ষদ সভার বৈঠকে শেয়ার বিক্রির চুক্তি বাতিল করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অংশীজনদের স্বার্থ রক্ষার জন্য চুক্তিটি বাতিলের প্রয়োজন ছিল। চুক্তি বাতিলের প্রাথমিক কারণ হিসেবে কোম্পানিটি চুক্তিকে ঘিরে বিতর্কিত কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে।
রিং শাইন টেক্সটাইলের উদ্যোক্তাদের ১৯ কোটি শেয়ার অধিগ্রহণ করার কথা ছিল ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলসের। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ অধিগ্রহণের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছিল।
জানা যায়, ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইলের রিং শাইনের উদ্যোক্তাদের বিপুল শেয়ার অধিগ্রহণের জন্য অর্থ পরিশোধ করার কথা ছিল না। রিং শাইনের বিপুল দেনা রয়েছে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে, মূলত সেই সব দায়দেনার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমেই কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের শেয়ার অধিগ্রহণ করবে ওয়াইজ স্টার, এমনটাই কথা ছিল। রিং শাইনের যত দায়দেনা আছে, সব বহন করবে ওয়াইজ স্টার, বিনিময়ে কোম্পানিটির মালিকানায় যুক্ত হবে তারা, এমন বন্দোবস্ত হয়েছিল।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে বিএসইসিই যখন এই শেয়ার হাতবদলের অনুমোদন দেয়, তখন সব মিলিয়ে রিং শাইনের দেনা ছিল ৪২২ কোটি টাকা। এই দেনার পুরোটা ওয়াইজ স্টারের অধিগ্রহণ করার কথা।
বিএসইসির সম্মতির পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে রিং শাইন বিনিয়োগকারীদের জানায়, ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলসের মালিকেরা রিং শাইনের ৯ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের প্রায় ১৯ কোটি শেয়ার অধিগ্রহণ করবেন; কোম্পানিটির মোট শেয়ারের যা প্রায় ৩৮ শতাংশ। রিং শাইনের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বেশির ভাগই বিদেশি নাগরিক।
২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রিং শাইন টেক্সটাইল। ওই সময় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা তুলেছিল কোম্পানিটি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর বছর না ঘুরতেই ২০২০ সালে রিং শাইনে সংকট দেখা দেয়। এ কারণে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ।
রিং শাইনের ওপর করা বিএসইসির নিরীক্ষায় জানা যায়, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির আড়ালেও পাচার করা হয় অর্থ। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটির মালিকানা হস্তান্তর বা নতুন কাউকে দিয়ে কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এর অংশ হিসেবে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার অধিগ্রহণের মাধ্যমে কোম্পানিটির পরিচালনার যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখায়।
কিন্তু এখন রিং শাইন মনে করছে, এই শেয়ার ক্রয় চুক্তি নিয়ে ওয়াইজ স্টারের কার্যক্রম বিতর্কিত। সে কারণে তারা এই চুক্তি বাতিল করছে। তারা আরও জানিয়েছে, ওয়াইজ স্টার বা তাদের মনোনীত কারো কাছে এখন রিং শাইনের কোনো শেয়ার নেই।