ঘরের মাটিতে কিউইদের কাছে ধবলধোলাই হলো ভারত
সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আরও আগেই। লাল বলের সিরিজের শেষ এবং তৃতীয় এই ম্যাচটি ছিল মান বাঁচানোর, ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হলো ভারত। আজ তৃতীয় দিনে এসে দাপুটে বোলিংয়ের সুবাদে ২৫ রানের জয় তুলে নিল কিউইরা।
ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতা রীতিমতো যুদ্ধ জয়ের মতো, হোয়াইটওয়াশ তো সেখানে বিশ্বযুদ্ধ জয়তুল্য ব্যাপার। যুদ্ধ জয়ের স্বাদ আছে মাত্র ৬টি দেশের (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ)। হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেয়েছিল কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা, ২৪ বছর আগের ওই সিরিজটি ছিল মাত্র ২ ম্যাচের। ৩ বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজে টিম ইন্ডিয়াকে তাদের মাটিতে প্রথম হোয়াইটওয়াশ করল নিউজিল্যান্ড।
তিন ম্যাচের সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে রোববার (৩ নভেম্বর) ২৫ রানে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ১৪৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ১২১ রানে অলআউট করে দিয়েছে তারা। প্রথম ইনিংসে তাদের ২৩৫ রানের পর ভারত ২৬৩ রান করে। বেঙ্গালুরুতে প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে জয়ের পর কিউইরা পুনেতে ১১৩ রানে জিতেছিল।
এই সিরিজের আগে ভারতের মাটিতে মাত্র ২টি টেস্টে জয় ছিল নিউজিল্যান্ডের। ১৯৬৯ সালে নাগপুরের পর ১৯৯৮ সালে ওয়াংখেড়ে টেস্টে জিতেছিল তারা। আবার এ বছর অস্ট্রেলিয়ার পর শ্রীলঙ্কার কাছেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নিউজিল্যান্ড। এমন অতীত নিয়ে ভারতের মাটিতে তাদেরই হোয়াইটওয়াশ করাটা বিস্ময়করই। তাও দলের সেরা ব্যাটার কেন উইলিয়ামসনকে ছাড়াই, ইনজুরির কারণে এ সিরিজে নেই সাবেক অধিনায়ক।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্রুত ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর রিশভ পন্ত ভারতকে লড়াইয়ে রাখেন। রবীন্দ্র জাদেজাকে অপর পাশে রেখে নিউজিল্যান্ডের হুমকি হয়ে দাঁড়ান তিনি। 'ওয়ানম্যান আর্মি' হয়ে ছাতুপেটা করছিলেন কিউই বোলারদের, খেলাটা হয়ে যায় পন্ত বনাম নিউজিল্যান্ডের। ভারতীয় উইকেটরক্ষক আউট হতেই তড়িৎ গতিতে উবে যায় ভারতের জয়ের স্বপ্ন।
নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৪ রানে অলআউট করে দিয়ে ১৪৭ লক্ষ্য পায় ভারত। রান তাড়া করতে নেমে টপাটপ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে শুরুটা করেন ম্যাট হেনরি। এরপর ব্যাটন হাতে নেন অ্যাজাজ প্যাটেল। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের স্পিন পিচের ষোলকলা সুবিধা নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনার শুভমান গিল ও বিরাট কোহলিকে সাজঘরে পাঠান। দুজনই ১ রান করে তুলেন। আগের ইনিংসে গিল ৯০ রান করলেও কোহলি আউট হয়েছিলেন মাত্র ৪ রানে। যশ্বসী জয়সওয়াল ততক্ষণ আশার বাতি হয়ে টিকে ছিলেন। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন গ্লেন ফিলিপস।
অ্যাজাজ প্যাটেল নেন সরফরাজ খানের উইকেটও। যদিও এরপর হাল ধরেন রিশভ পন্ত। ৫ উইকেট পড়ার পর রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে জুটি বাধেন তিনি। লাঞ্চ বিরতি শেষে আউট হন জাদেজা। ২২ বলে ৬ রান করে অ্যাজাজের বলে উইল ইয়ংকে ক্যাচ দেন তিনি। পন্ত তখনও সংগ্রামে অবিচল থাকেন।
প্যাটেলের অফস্টাম্পের বাইরে ফেলা একটি বল এগিয়ে খেলতে যান পন্ত। দ্রুত টার্ন নিয়েই বল ঢুকে যায় পায়ের দিকে। ব্যাট-প্যাডের পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া বল তালুবন্দী করেন টম ব্লান্ডেল। রিভিউ নেবেন কি না, দোটানায় ছিলেন টম লাথাম। শেষ মুহূর্তে গিয়ে রিভিউ নেন তিনি। রিভিউয়ে দেখা যায় বল প্যাডে লাগার আগে ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। আম্পায়ারের সঙ্গে কিছুক্ষণ বোঝাশোনা সেরে পন্তকে মাঠ ছাড়তে হয়। ৫৭ বলে ৬৪ রান করেন তিনি। তখন ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল আর ৪১ রান।
মুত্যুকূপে পরিণত হওয়া উইকেটে এরপর আর ভারতকে পথ দেখাতে পারেননি ওয়াশিংটন সুন্দর, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, আকাশ দীপ ও মোহাম্মদ সিরাজ। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া প্যাটেল এ ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট। গ্লেন ফিলিপসের শিকার ৩, হেনরির ১।