বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে : আইরিন খান
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছায়ানটের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার (বিশেষ প্রতিবেদক-বিশ্লেষক) আইরিন খান। তিনি অবিলম্বে ঘটনার কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
আইরিন খান জাতিসংঘের মতপ্রকাশ ও মতামতের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ও বিশ্লেষক। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের তরুণ নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদি প্রকাশ্যে গুলিতে নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপরেও হামলা হয়।
আইরিন খান বলেন, হাদি হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন সাংবাদিক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দেশ যখন নির্বাচনমুখী, তখন সাংবাদিক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে জনরোষকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা চরম বিপজ্জনক।
আইরিন খান সতর্ক করে বলেন, এসব হামলার পরিণতি গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। তা ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর ও ভিন্নমতের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
জাতিসংঘের এই বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, এই হামলাগুলো এমনি এমনি হয়নি। দায়মুক্তির সংস্কৃতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা এবং গণমাধ্যম ও শিল্পীদের স্বাধীনতা রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আইরিন খানের মতে, গত এক বছরে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা– বিশেষ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা– রাষ্ট্রীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় উভয়ভাবে চাপের মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর কয়েকশ সাংবাদিককে রাজনৈতিকভাবে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুরুতর অপরাধের সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বিচারে আটক রাখা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আইরিন খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগের মতোই দায়মুক্তির ধারা অব্যাহত রেখেছে। দোষীদের শাস্তি না হওয়ায় হামলা ও হুমকি কার্যত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কার্টুনিস্ট, ব্যঙ্গশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নারীসমাজ নানা সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেন, ঘৃণামূলক বক্তব্য ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সহিংসতা অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে।
আইরিন খান নির্বাচনের আগে সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর সুরক্ষা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সুশীল সমাজের নেতা, রাজনৈতিক প্রার্থী, নারী ও সংখ্যালঘুরা যেন নির্ভয়ে তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ।
Comments