সাড়ে ১১ ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
ঢাকার কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকায় অবস্থিত জাবালে নূর টাওয়ারে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা চেষ্টার পর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ভবনের ভেতরে এখনো ঘন ধোঁয়া থাকায় উদ্ধার ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে ভবনের নিচতলায় থাকা কাপড়ের ঝুটের গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন হওয়ায় এতে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস প্রথমে ১৪টি ইউনিট নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে আরও ৬টি ইউনিট যুক্ত হয়ে মোট ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। বেজমেন্টে দোকান ও ঝুট গোডাউন থাকায় এবং ঘন ধোঁয়ার কারণে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে বেগ পেতে হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় এখনও ধোঁয়া রয়েছে এবং কিছু স্থানে আগুনের ফ্লেম দেখা যাচ্ছে। পাশের ভবনগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের সদস্যরা একযোগে কাজ করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় আশপাশের দোকান ও গুদামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধার কাজে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী আলামিন জানান, "সকাল থেকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসায়ী ভাইদের মালামাল বের করার চেষ্টা করেছি। অনেক কাপড় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
দোকান মালিকদের অভিযোগ, নিরাপত্তাজনিত কারণে ফায়ার সার্ভিস ভবনের ভেতরে প্রবেশ সীমিত করায় অনেক মালামাল বের করা যায়নি। ভবনটিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান ও ফ্ল্যাট রয়েছে। তাদের দাবি, এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত ক্ষতির চিত্রও হৃদয়বিদারক। কুমিল্লার রুবেল, যিনি হকার থেকে দোকান মালিক হয়ে ১৭ বছরের পরিশ্রমে গড়ে তোলা ব্যবসা মুহূর্তেই হারিয়েছেন। রায়হানের প্রায় ২ কোটি টাকার দোকান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর জুড়াইনের সালাম বাবার জমি বিক্রি করে কেনা শীতের পোশাকের মালামাল পুড়তে দেখেই নির্বাক হয়ে পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন লাগার সময় ভবনের ভেতরে আটকা পড়া ৪২ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, ১২ তলা ভবনটির আট তলা আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবনের মালিক হাজী নুর আলম। ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারে বিধিবিধান মানা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ভবনের ভেতরে ধোঁয়া থাকায় উদ্ধার ও পর্যবেক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বেজমেন্টে ঝুট গোডাউন থাকায় ধোঁয়ার মাত্রা বেশি ছিল। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত শেষে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
Comments