নারীরা পরিবার, সমাজ, প্রশাসন—কোথাও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
নারীরা পরিবার, সমাজ, প্রশাসন—কোথাও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, নারীরা আগের চেয়ে চলাফেরা, আচরণের ক্ষেত্রে যে ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা কল্পনা করা যায় না।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে 'চ্যালেঞ্জিং সোশ্যাল নমর্স অ্যান্ড পাওয়ার ডায়নামিকস: টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার-ফ্রি ফিউচার'শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কর্মসূচি উপলক্ষে এই সংলাপের আয়োজন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
সংলাপে ঢাকার বাইরের নারীদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ঢাকা শহর তো কিছুই না, মফস্সলে নারীরা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। পরিবার, সমাজ, প্রশাসন—কোথাও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না।
এ সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সংগীতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে তাঁরা ঢাকার বাইরে প্রাক্–নির্বাচনী সভা করছেন। সভার উদ্দেশ্য, আগামী সরকারের কাছে জগণের প্রত্যাশা ও নির্বাচন কমিশন কতখানি কাজ করতে পারবে, তা নিয়ে মানুষ কী ভাবছে, তা বোঝা। তিনি বলেন, এসব আলোচনায় প্রথম দিকে সুশাসন ও দুর্নীতিটা জনগণের কাছে খুব বড় বিষয় ছিল। তবে এখন এক নম্বরে রয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক—এই চার ধরনের নিরাপত্তার কথা উঠে আসছে।
মফস্সলের চিত্র তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না ওই সব নারী কীভাবে একটি নিরাপদ জায়গা খোঁজেন, যেখানে এসে কথাগুলো বলতে পারেন।…হিজড়া সম্প্রদায় যে কথা বলে, ওরা তো আত্মগোপনে চলে গেছে। অন্য যেসব ধর্মীয় মতবাদ আছে, তারা তো আত্মগোপনে চলে গেছে। মিটিং করতে চাইলে বলে, "দাদা, মিটিং করার দরকার নেই। আমরা এখন রাডারের নিচে থাকি। মিটিং করলে আরও সমস্যা হবে।"'
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক, সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে এবং তার বহুলাংশই হলেন নারী। তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্যের যে প্রক্রিয়া এবং এই মুহূর্তে বিনিয়োগ না থাকা, যুবসমাজের কর্মসংস্থান না থাকায় নারীরা অনেক বেশি নিপীড়িত হচ্ছেন আর্থিক দিক থেকে।
সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার বিষয়ে শুধু গানবাজনা বন্ধ হওয়া নয়, পরিবারের ভেতরেও আচরণ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সমাজের সঙ্গে নারীদের অন্যান্য যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পূর্ণবিকাশের জায়গাগুলো থমকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক মতবাদের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি নিরাপত্তাহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই উত্তরণের সময়ে নারীরা রাজনৈতিক মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
Comments