অটো মাহিন্দ্রা চালক থেকে কচুর লতি ও পেপে চাষে সফল
অটো মাহিন্দ্রা দালিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না বিকাশ মিস্ত্রী। গাড়ি চালানোর সুবাদে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কৃষি কাজে উদ্ভুদ্ধ হয়ে নিজেই শুরু করেন লতিরাজ বারি কচু-১ চাষ। ৫০ শতক জমির লতি পাল্টে দিয়েছে তার জীবন। আর ফিরতে হয়নী গাড়ির চাকা ঘুরাতে। বর্তমানে তিনি প্রায় ২ একর জমিতে চাষ করছেন কচুর লতি। বিকাশের ভালো আয় দেখে কচুর লতি চাষে আগ্রী হচ্ছে স্থানীয়রা।
বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বায়েলাখালী গ্রামের বিকাশ মিস্ত্রী । গত ৩ বছরে তার কৃষির প্রতি আগ্রহ বেড়ে কচুর লতির পাশাপাশী এখন চাষ করছেন, পেপেঁ, লাউ, ধুন্দল, বরবুটি সহ বিভিন্ন সবজি। বাৎসরিক আয়ে পরিবার চলে, ভালো মুনাফা হওয়ায় প্রতিনিয়তই স্বপ্ন দেখছেন বৃহৎ আকারে কৃষি খামার গড়েতোলার।
বিকাশ জানায়, কৃষি কাজের প্রথম দিকে অনেকটাই হতাশা আর নানা বিড়ম্বনার শিখার হতে হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে এই কাজে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। এখন কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিকাশ জানায়, কৃষি কাজে আসলে যারা আসতে চায় তারা প্রথমে অনেকেই লস খায় এবং সঠিক পরামর্শ কিংবা কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ না থাকায় হয়রানী শিকার হতে হয়। আর মাঠ পর্যায়ে তেমন একটা কৃষি কর্মকর্তারা আসে না। যারা সফল হয় তাদের কাছেই কৃষি কর্মকর্তারা যায় বেশী।
তিনি বলেন, একজন নতুন কৃষি উদ্যোগতাকে কৃষি বিভাগ যদি ভালো ভাবে পরামর্শ ও পাশে থেকে তাকে সহযোগীতা করে তাহলে এই পেশায় আরও মানুষ আগ্রহ দেখাবে। আমার দেখা মতে অনেক কৃষক আছে যখনই একজন খামার কিংবা ভালো ফসল উৎপাদন করে তখনই তাদের চোখে সেটা পড়ে এবং সেখানে গিয়েই তারা ক্রেডিট নিতে চায়। এখন পর্যন্ত আমার নিজের চেষ্টায় এই পর্যন্ত এসেছি। তাছাড়া বাবুগঞ্জে আমার আশে পাশে অনেক কৃষক আছে এখন পেপেঁ সহ নানাধরনের সবজি আবাদ করে তাদের কাছে কোন সময় কৃষি বিভাগের কোন একজন কর্মিকে আসতে দেখিনি।
বিকাশ বলেন, যদি কোন কিষক সফল হয়েছে তার কোন নিউজ প্রচার হলে তাকে তারা ফলাউ করে কিন্তু একজন নতুন উদ্যোগতাকে তারা কোন ধরনের সহায়তা দেয় না। এটা খুবই দু:খজনক।
ববুগঞ্জ এলাকায় এই প্রথম বড় পরিসরে বিকাশের এই উন্নত দেশীয় জাতের লতিরাজ বারি কচু-১ চাষাবাদ দেখে স্থানীয়রা উদ্ভূদ্ধ হচ্ছে। প্রতিদিনই চারা এবং নানা পরামর্শ নিতে তার কৃষি খামারে আসছেন নতুন নতুন কৃষি উদ্যোগ তারা।
পাশের গ্রাম থেকে আসা সাইদুল মল্লিক বলেন, লতিরাজ কচু দেখলাম পরিত্যাক্ত জমিতেও ভালো ফলন হয়। বিকাশের চাষাবাদ দেখে তার কাছে চারার অর্ডার দিয়েছি আগামি সিজনে আমিও চাষ করব। তাছাড়া এই কচুর লতি চাষ বাবুগঞ্জে তেমন একটা নেই। বিকাশ দার কাছেই দেখলাম।
সাইদুল মল্লিক, বর্তমান বাজারে কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর এর ফলন ও ভালো বছরের ৮ মাস একটা গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি লতি হারভেস্ট করা যায়। এই লতি খেতেও মিস্টো যার কারনে বাজারে অনেক চাহিদা। তাছাড়া এই কচুর লতি শেষ হলে কচুটিও বাজারে ভালো দামে বেচা যায়।
বিকাশের খামারে কাজ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এলাকার অনেক যুব সমাজের। তেমনই ভুব্রত বৈরাগী বিকাশের খামারে নিয়মিত কাজ করেন। এখান থেকে তার উপার্জ পরিবার চলেযাচ্ছে। পাশাপাশি সুজন নিজেও ছোট পরিসরে নানা ধরনের সবজির আবাদ করেন।
সুব্রত বৈরাগী আরও বলেন, লতিরাজ বারি কচুর লতি অনেক হয়। জমি চাষের পর তেমন একটা পরিচর্যা লাগে না। শুধু আগাছা পরিস্কার করা আর নিয়মিত পানি দিলেই হয়ে যায়।
বিকাশের পেপেঁ বাগানে গাছ ভরে ঝুলছে শাহী জাতের পেপেঁ। এবছর বিকাশ ৫০ শতাংশ জমিতে পেপেঁর চাষ করেছেন। প্রায় ২৫০টি গাছে কচা-পাকা মিলিয়ে ভালো একটা মুনাফা অর্জন করেছে, এখনও গাছে অনেক ফল ঝুলে আছে তা থেকেও ভালো আয় হবে তার। এছাড়া সিজন বুঝে নানা সবজি চাষাবাদে বছরে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করছেন বিকাশ মিস্ত্রী।
বিকাশের মত অনেক উদ্যোগ তারাই এখন কৃষি কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে। যাতে করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে স্বাবলম্বি হচ্ছে এই সব প্রান্তিক কৃষকরা।
Comments