নির্বাচনের পক্ষে ব্যাপক ঐকমত্য দেশে বিরাজ করছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের পক্ষে। বেসামরিক আমলা, সামরিক প্রশাসন, পেশাজীবী সমাজ, ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং তরুণ সমাজও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন চায়। নির্বাচনের পক্ষে একটি ব্যাপক ঐকমত্য দেশে বিরাজ করছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহীতে 'নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগ'-এর রাজশাহী আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
সেখানে সংস্কার, সুশাসন, নিরাপত্তা, প্রার্থী নির্বাচন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা সংস্কার, স্বাস্থ্য সংস্কার, আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ নানা বিষয়ে অংশগ্রহণকারীরা মত দেন। এ ছাড়া, আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের বিবেচ্য বিষয় ও সরকারের কাছে প্রত্যাশার বিষয়গুলো তারা তুলে ধরেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংসদে যাদের প্রতিনিধিত্ব নেই, উচ্চকক্ষে তাদের জায়গা করে দিতে হবে। উচ্চকক্ষে প্রতিবন্ধীদের, সমতলের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা—এসব বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে থাকা উচিত।
তিনি বলেন, আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সময়মতো হবে। কারণ, নির্বাচন হওয়ার পক্ষের শক্তি এখন বাংলাদেশে অনেক বেশি। নির্বাচন হওয়ার পক্ষের বড় শক্তি বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তিনি সময়মতো নির্বাচন চান। তার সহযোগীরাও চান নির্বাচন সময়মতো হোক। নির্বাচনের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বলিষ্ঠ।
তিনি আরও বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি, তবে সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলি না। আমি পিছিয়ে পড়া কোনো কোনো মানুষের কথা বলি, কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের কিংবা সমতলের আদিবাসীর কথা ঠিকমতো বলি না। আমরা মুক্ত বাকের কথা বলি, কিন্তু যখন সুফি-বাউলদের কথা বলা হয়, তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থানে যাই। তাই, একটা বৈষম্যবিরোধী আইন লাগবে।
সভা শেষে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অংশগ্রহণকারীরা দেখতে চাচ্ছে একটা নির্বাচন, যেখানে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন। ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করা, সোশ্যাল মিডিয়া-সামাজিক মিডিয়ার অপব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং যথাপযোক্ত প্রার্থীকে দাঁড় করানোর ব্যাপারে খুব বড়ভাবে কথা আসছে। নির্বাচনের ব্যয় যদি কমানো না যায়, তাহলে দুর্নীতি কমানো মুশকিল হবে। প্রত্যেকটা জনপ্রতিনিধি কী দায়িত্ব পালন করলেন, বাৎসরিকভাবে সেই হিসাব দেওয়ার কথা তারা বার বার বলছেন।
তিনি বলেন, রাজশাহীকে কেন্দ্র করে চারটি বড় বড় বিষয় উঠে আসছে। রাজশাহী মরুকরণ হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে পদ্মা ও তিস্তার পানি সংকটকে নিরসন করা। দ্বিতীয়ত জ্বালানি সংকট রয়েছে। বিশেষ করে গ্যাসের সমস্যা। যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কথা এসেছে। এখানে শিল্প নেই। শিল্পায়নের ব্যাপারে অনেকে গুরুত্বারোপ করেছেন। স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, দরিদ্র মানুষের সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপারে কথা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি এসেছে নিরাপত্তার বিষয়টি। এটি শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয় না, সামাজিক নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আসছে। নিরাপত্তার বিষয়টিকে মানুষ সুশাসনের, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার, প্রশাসনের দক্ষতা-সক্ষমতার, রাজনৈতিক মনোভাবের এবং সরকারের অভিপ্রায়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেখেছেন। অর্থাৎ নিরাপত্তার বিষয়টিকে তারা সামগ্রিকতায় বিচার করেছেন।
এর আগে, পরামর্শ সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান, স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী, ডাসকো কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, কলেজশিক্ষক মোশাররফ হোসেন, শিক্ষার্থী ফুয়াদ রাতুলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের মতামত তুলে ধরেন। তাদের এসব মতামত নাগরিক ইশতেহার হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে।
Comments