জামালপুরে ক্লিনিকের অনুমোদন না হলেও মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ পদে আল মাসুমকে নিয়ে নানা প্রশ্ন
জামালপুর শহরের শেখেরভিটা এলাকায় অবস্থিত নতুন একটি বেসরকারি হাসপাতাল 'আল মাসুম জেনারেল হাসপাতাল'। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সেবার আশ্বাস সাইনবোর্ডে থাকলেও বাস্তবে হাসপাতালটি এখনো তার কার্যক্রম শুরুর সরকারি কোনো অনুমোদন পায়নি। সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতালটির মালিক আল মাসুম জামালপুর জেলা বেসরকারি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ পদে মনোনীত হয়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এই সমিতির নির্বাচনে ভোটার তালিকায় তার নাম না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে নাম দেখে অবাক হয়েছেন সমিতির সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি স্থাপনের সময় থেকেই প্রয়োজনীয় লাইসেন্সের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবুও সমিতির সদস্যপদ ও পদপ্রাপ্তির বিষয়টি অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। এই হাসপাতাল সম্পর্কে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছেও নেই কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য।
জামালপুর জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. আজিজুল হক জানান, এখন পর্যন্ত আল মাসুম জেনারেল হাসপাতালের কোন আবেদন বা বৈধ অনুমোদন নেই৷ তবে আল মাসুম ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদের অপেক্ষায় আছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে সব দেখে এসেছি। এছাড়া আল মাসুম জেনারেল হাসপাতালের নামে কোন লাইসেন্স নেওয়া হয়নি।
আল মাসুম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক আল মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, আল মাসুম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। তবে আমরা হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো চালু করিনি। এটির অনুমোদন সামনে নেওয়া হবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচয়েই সদস্য হয়েছি জেলা বেসরকারি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির। এরপর কোষাধ্যক্ষ পদ পেয়েছি।
এদিকে সমিতির কিছু সদস্যও বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, যারা এখনো লাইসেন্স না পেয়ে হাসপাতাল চালাচ্ছেন, তাদের কোনোভাবেই নেতৃত্বের পদে রাখা উচিত নয়। এতে সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হযরত শাহ জামাল (র:) জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বুলবুল ইসলাম বলেন, মালিক সমিতির নির্বাচনের সময় আল মাসুম নামের কোন হাসপাতাল সদস্য ছিলো না। সেই সাথে লাইসেন্স নেই এই হাসপাতালের। লাইসেন্স না থাকায় সদস্য পদ পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর কোষাধ্যক্ষ পদ সহ কমিটি গঠনের পূর্বে সাধারণ সভার মাধ্যমে কমিটি গঠণ করতে হয়। যা এই মালিক সমিতির নির্বাচিত কর্মকর্তারা করেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিটির তালিকা দেখে একজন সদস্য হয়ে হতবাক হয়েছি মাত্র।
স্থানীয়রা জানান, লাইসেন্স না থাকলে হাসপাতাল চালানো মানে মানুষের জীবনের সঙ্গে খেলা করা। আর তারা যদি সমিতির নেতা হয়, তাহলে অন্যরা কেমন উদাহরণ নেবে?"
জামালপুর জেলা বেসরকারী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ বি এম মাকসুদুর রহমান সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, আল মাসুম জেনারেল হাসপাতালের মালিক আল মাসুম পূর্বের কমিটির সময় সমিতির সদস্য ছিলেন। একজন প্রার্থীর কারনে নির্বাচনের সময় ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।নির্বাচনের পর সমিতির সব নিয়ম মেনেই তাকে কোষাধ্যক্ষ পদে মনোনীত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে সরকার বারবার অনুমোদন ও মান নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিলেও অনেকেই তা অমান্য করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকলে এই ধরনের অনিয়ম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। একই সাথে লাইসেন্স না পেয়েও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ায় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে সেবার চাইতে ক্ষমতা প্রদর্শনের বিষয়টি বেশি উল্লেখিত হবে বলে জানান সচেতনমহল।
Comments