জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দল সাক্ষাৎ চায় প্রধান উপদেষ্টার
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ চায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আন্দোলনে থাকা আট দল।
আজ মঙ্গলবার পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশের পর ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামীকাল বুধবারের মধ্যে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হবে। আলোচনায় ফলপ্রুস সিদ্ধান্ত না এলে আট দল কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, নির্বাচনের আগে গণভোট, অন্তত সংসদের উচ্চকক্ষে পিআরসহ পাঁচ দাবিতে আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করছে আট দল। একই দাবিতে আজ সমাবেশ করে হুঁশিয়ারি দেয়, সনদের আইন ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তবে সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। জানানো হয়, শীর্ষ নেতাদের বৈঠক থেকে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশের পর বিকেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের সূত্র জানিয়েছে, এখনই কঠোর কর্মসূচি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আট দলের নেতারা মনে করেন, কর্মসূচি দিলে তারা নির্বাচন বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন। আগামী বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে 'জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫' এবং গণভোটের সময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। তাই এর আগেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করতে চায় আট দল।
গত ১৭ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাব রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতি, উচ্চকক্ষে পিআরসহ ১৫ সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) রয়েছে। স্বাক্ষরের আগের দিন বিএনপির দাবিতে সনদে নোট অব ডিসেন্ট যুক্ত করা হয়।
তবে গত ২৮ অক্টোবর কমিশন সুপারিশে 'জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫' এর যে খসড়া দিয়েছে তাতে নোট অব ডিসেন্ট নেই। সুপারিশ করা হয়েছে, গণভোট হবে আদেশের ওপর, নোট অব ডিসেন্ট থাকবে না।
বিলুপ্ত ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বলা নেই, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ কে জারি করবে এবং গণভোট কখন হবে। এই দুই সিদ্ধান্ত তারা সরকারকে নিতে বলেছে।
কমিশনের তৈরি আদেশের প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনে না পারলে, অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি সংবিধান সংশোধনের বিল পাস বলে গণ্য হবে। গণভোট হবে আদেশ এবং সংবিধান সংশোধনের বিলের ওপর।
দ্বিতীয় খসড়ায় বলা হয়েছে, গণভোট হবে আদেশ এবং তপশিলে যুক্ত সংস্কারের ৪৮টি প্রস্তাবের ওপর।
বিএনপি আদেশ জারি, নির্বাচনের আগে গণভোট এবং ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতার বিরোধী। দলটি চায় নোট অব ডিসেন্ট অনুযায়ী গণভোট হবে। আগামী সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নোট অব ডিসেন্ট অনুযায়ী সংবিধান সরকার করতে পারবে।
জামায়াত ও এনসিপি নোট অব ডিসেন্ট রাখার বিপক্ষে। তারা প্রথম খসড়া অনুযায়ী আদেশ এবং এর ওপর গণভোট চায়। জামায়াতসহ আট দল নির্বাচনের আগে গণভোট চায়। পরস্পর বিরোধী দল এই অবস্থানের অবসানে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহ্বান জানালেও, দলগুলো আলোচনায় বসেনি। নিজ নিজ অবস্থান অনড় রয়েছে।
মঙ্গলবার আট দলের সমাবেশের পর ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে দলটির আমির তথা চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অধ্যক্ষ সারওয়ার কামাল আজিজী, জাগপার সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বিডিপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান বৈঠকে বসেন। সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
Comments