অবৈধ কর্মকাণ্ডে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে পুলিশ
আগামী ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্লকেড কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ১১ নভেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দল। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান আছে। অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঐ দুটি দিন ঘিরে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। এরই মধ্যে বাড়তি নিরাপত্তা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অন্যান্য ইউনিটগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হয়েছে তৎপরতা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে সব থানা ও ডিবির টিম চোখ রাখছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আট বিভাগের ১৪২টি পয়েন্টকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে। প্রতিটি বিভাগের ডিসিদের তদারকিতে এই নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে রমনায় সর্বোচ্চ ৩৪টি, মিরপুরে ১৪টি, ওয়ারীতে ১৬টি, মতিঝিলে ১৭টি, লালবাগে ১৫টি, উত্তরায় ১৬টি, গুলশানে ১৪টি এবং তেজগাঁওয়ে ১৬টি স্পট রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেছেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা বা অরাজকতা ঠেকাতে পুলিশ সবসময় তত্পর।
লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার বলেন, লকডাউন ঘিরে বাড়তি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত শনিবার বিকালে ৮ বিভাগের ১৪২ স্পটে 'অনগার্ড মোবিলাইজেশন ড্রিল' করেছে পুলিশ। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ সচিবালয়, হাইকোর্ট, সংসদ ভবন, বঙ্গভবন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় চলে পুলিশের এই মহড়া।
ডিএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে কাকরাইল চার্চ ও সেন্ট যোসেফ স্কুলে ককটেল নিক্ষেপ, ধানমণ্ডির শংকর এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের মশাল মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শনিবার সকালে ডিএমপির সব জোনের ডিসি এবং থানার ওসিদের নিয়ে সভা করেন পদস্থ কর্মকর্তারা। বেশ কয়েক দফায় হয়েছে এই সভা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, ঢাকায় প্রবেশ মুখগুলোয় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে। ১৩ নভেম্বরের আগে ১১ নভেম্বর ঢাকায় জামায়াতসহ আটটি রাজনৈতিক দল রাজধানীতে সমাবেশ করবে। সেখানে যেন কোনো ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকে পুলিশ সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। কর্মসূচি যাতে নির্বিঘ্ন হয়—সেজন্য ঐসব দলের নেতাদের সঙ্গেও পুলিশ যোগাযোগ রাখছে। সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতির সমন্বয় করছে ডিএমপি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তত্পরতা আছে।
এদিকে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ১৩ নভেম্বর ঢাকা শহরে লক ডাউন কর্মসূচি সফল করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিনই যখন ঝটিকা মিছিল করার সময় বা প্রস্তুতির সময় লোকজননকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাজনৈতিক কার্যালয় ও কৌশলগত মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকেও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রবিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাপক অভিযান। এই অভিযানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও যুক্ত রয়েছে। সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৩ নভেম্বর ঘিরে বড় কোনো সহিংসতার নির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর অপপ্রচার চলছে। আমরা এসব তথ্য হালকাভাবে নিচ্ছি না। রাজধানীসহ সারা দেশে চেকপোস্ট বৃদ্ধি, তল্লাশি ও অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবি না মানলে ১১ নভেম্বর কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবে আন্দোলনরত জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আট দল। সর্বশেষ আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ফলে এই সমাবেশের দিকেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ নাশকতার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকার প্রবেশপথ, হোটেল, মেস ও বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোয় বিশেষ তল্লাশি শুরু হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের গোয়েন্দা ও সাইবার মনিটরিং টিম সক্রিয় রয়েছে। সুনির্দিষ্ট আশঙ্কা না থাকলেও র্যাব সর্বোচ্চ প্রস্তুত। অতিরিক্ত টহল ও চেকপোস্ট স্থাপনের কাজ চলছে।
Comments