গ্রেফতার সেনা কর্মকর্তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন সেনাসদর
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি এখনো বহাল আছে কি না, সেই প্রশ্নে বিষয়টিকে 'আইনগত প্রক্রিয়া' বলে উল্লেখ করেছে সেনাসদর।
সেনাসদর বলছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে অভিযোগপত্রে নাম এলে চাকরি যাওয়ার বিধানটি স্পষ্ট করা হয়নি। সেনাসদর সেটি স্পষ্টীকরণের অপেক্ষায় আছে।
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের চাকরির অবস্থা সম্পর্কে সরকার এখনো স্পষ্ট করে নির্দেশনা জারি করেনি বলে জানায় সেনাসদর।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সেনাসদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাসদরের পিএস পরিদপ্তরের এজি শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে জোরপূর্বক গুম এবং জুলাই আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছিল। ওই ১৫ কর্মকর্তা এখনো চাকরিতে আছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিগত কাঠামোর আওতায় পড়ে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আপনি ৬ অক্টোবর প্রকাশিত আইসিটি বিধিমালার তৃতীয় সংশোধনীর কথা বলছেন। সেই সংশোধনীতে, কোনো সরকারি পদে থাকার অযোগ্যতার বিষয়টি উঠে এসেছে। বৈধতার কোনো সমস্যা নেই, বরং ব্যাখ্যার প্রশ্ন রয়েছে, কারণ এটি বিভিন্ন উপায়ে বোঝা যায়।
তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি এবং একটি স্পষ্ট নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। যদি অযোগ্যতা মানে চাকরিচ্যুতি হয়, তাহলে চাকরিচ্যুতি কীভাবে কার্যকর করা হবে তা সংশোধনীতে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে সরকারি পদের সংজ্ঞাও আরও স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন। আমরা আশা করি, বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সমাধান হবে এবং একটি ইতিবাচক ফলাফল আসবে।
এর আগে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর বলেন, ১৯৫২ সালের সেনা আইন এবং ১৯৭৩ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন উভয়ই বিশেষ আইন।
'এই দুটি বিশেষ আইন মুখোমুখি করা হবে না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে। আমরা সরকারের সঙ্গে জড়িত এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাই বিচারটি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হোক'- বলেন তিনি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর আরও বলেন, আমরা জোরপূর্বক গুম এবং হত্যার শিকারদের প্রতি সহানুভূতিশীল। একই সঙ্গে, আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতন। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছি এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী এগিয়ে যাবো।
'সরকার যদি সেনা আইনের অধীনে বিচার পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা তার জন্য প্রস্তুত'- বলেন এ সেনা কর্মকর্তা।
ট্রাইব্যুনাল ১৫ জন সেনা অফিসারসহ ৩২ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর গত ৮ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ১১ অক্টোবর সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে, ১৫ জন কর্মরত অফিসারকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউশনের মতে, জোরপূর্বক অন্তর্ধানের একটি মামলা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক পরিচালিত টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলের সঙ্গে সম্পর্কিত। অভিযোগ অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৪ জন আটক ব্যক্তিকে আটক করে নির্যাতন করা হয়েছিল।
মামলায় ১৭ জন অভিযুক্তের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১০ জন প্রাক্তন র্যাব কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে হাজির হন।
Comments