বালুময় মাটিতে শিকড় গাড়ছে প্রযুক্তি ও পরিশ্রমের সংমিশ্রণ
গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল—যেখানে একসময় বন্যা,খরা আর দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী, সেখানেই এখন ফুটে উঠছে নতুন সম্ভাবনার আলো। বালুময় মাটিতে শিকড় গাড়ছে প্রযুক্তি ও পরিশ্রমের সংমিশ্রণে চরবাসীর জীবন ও অর্থনীতিতে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে এসেছে উন্নত জাতের রঙিন গাজর চাষ।
বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষণা ব্যবস্থাপনায় গাইবান্ধার কামারজানি চরে শুরু হয়েছে একটি বিশেষ পাইলট প্রকল্প। ইতোমধ্যে চরাঞ্চলের কৃষক তছলিম মিয়াসহ অনেকেই পতিত জমিতে উচ্চফলনশীল গাজর চাষে ঝুঁকছেন।
বালুময় মাটিতে এখন শিকড় গাড়ছে আশা, পরিশ্রম আর প্রযুক্তির সংমিশ্রণ। তরুণ গবেষকদের পরামর্শে চরের কৃষকরা দেখছেন দিনবদলের স্বপ্ন। কামারজানির মাঠে যেন গড়ে উঠছে এক রঙিন কৃষি বিপ্লব—যেখানে গাজরের রঙে বদলে যাচ্ছে জীবনের রঙ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা স্থানীয় কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মাটি প্রস্তুত, বীজ বপন, সার প্রয়োগ, রোগ দমন থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই তাদের পাশে রয়েছেন গবেষক দল।
গবেষণা অনুযায়ী, দেশে প্রচলিত গাজর চাষে প্রতি হেক্টরে যেখানে ফলন ১০ থেকে ১১ টন, সেখানে নবউদ্ভাবিত জাত থেকে মিলছে ৩০ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত ফলন। এই গাজর ৭০–৮০ দিনের মধ্যেই সংগ্রহযোগ্য হয় এবং প্রতিটির গড় ওজন ২০০–২৫০ গ্রাম। দেশের উষ্ণ ও খরাপ্রবণ অঞ্চলেও এ জাতের গাজর টিকে থাকে, যা কৃষকদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল আলম বলেন, "চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ কমিয়ে গাজরসহ পুষ্টিকর ফসলের দিকে ঝুঁকলে কৃষক স্বল্প খরচে উচ্চ মুনাফা পেতে পারেন। এতে কৃষকের আয়ের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।"
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও তরুণ গবেষক ড. মো. হারুন অর-রশিদ বলেন, "চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষের তুলনায় গাজর চাষে চারগুণ পর্যন্ত মুনাফা সম্ভব। এখানকার বালুমিশ্রিত ও পলিযুক্ত মাটি গাজর চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।"
তার মতে, উন্নত জাতের গাজর চাষ গাইবান্ধার চরবাসীর জীবন ও অর্থনীতিতে এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।
Comments