৩৪ কোটি ব্যয়ে নতুন ভবন, তবুও মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের পুরোনো ভবনের পাশে নির্মিত নয়তলা নতুন ভবনটি তিন বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনটি এখন আগাছায় ঢেকে গেছে, ফটকে ঝুলছে তালা, আর রোগীরা শয্যা-সংকটে পুরোনো ভবনের বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, এত বিপুল অর্থ ব্যয়ে ভবন নির্মাণের পরও তা চালু না হওয়া সরকারের অদক্ষতার প্রমাণ। দ্রুত নতুন ভবন চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রয়োজনীয় জনবল, আসবাব ও যন্ত্রপাতি না থাকায় ভবনটি চালু করা সম্ভব হয়নি; এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
"ভর্তি হওয়ার মতো পরিবেশ নেই"
গাইবান্ধা শহরের পূর্বপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী বিশাল সাহা বলেন,আমার মা বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক ভর্তি করে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ভেতরে এমন দুর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশ—নাক চেপে থাকতে হয়। বাধ্য হয়ে মা'কে ভর্তি না করে বাড়ি ফিরেছি।"
"নির্মাণ শেষ, তবুও ঝুলে আছে উদ্বোধন"
গাইবান্ধা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জুনে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্টস লিমিটেড। স্থানীয় ঠিকাদার সাইদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের মাঝামাঝি ভবন নির্মাণ শেষ হয়।
২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গণপূর্ত বিভাগ ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে চাইলেও, অতিরিক্ত কাজ বাকি থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভবন বুঝে নেয়নি। এরপর প্রায় এক বছর কেটে গেলেও চালুর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
"ধুলাবালিতে ঢাকা আধুনিক ভবন"
সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন ভবনের চারপাশে আগাছা ও জলাবদ্ধতা, ফটকে মরিচা পড়া তালা, ধুলায় ঢাকা কক্ষ ও পাখায় মাকড়সার জাল। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় অনেক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ ভবনটিতে রয়েছে চারটি লিফট, জেনারেটর, মেডিকেল গ্যাস লাইন, ২০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট ও ১০ শয্যার আইসিইউ সুবিধা।
"রোগীর ভিড়ে হিমশিম পুরোনো ভবন"
পুরোনো ভবনে প্রতিদিন গড়ে ১,০০০–১,২০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আরএমও মোহাম্মদ আসিফ। "প্রতিদিন গড়ে ৬০–৭০ জন ভর্তি হন। শয্যা না থাকায় মেঝে ও বারান্দায় রোগী রাখতে হয়," বলেন তিনি।
"সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে"
গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন,নতুন ভবন চালু না হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত ভবনটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।"
"জনবল সংকটে বন্ধ নতুন ভবন"
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সালে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনো ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই কাজ চলছে। নতুন ভবন চালুর জন্য পর্যাপ্ত জনবল অনুমোদনের আবেদন করা হয়েছে।
Comments