রাত পোহালে শুরু রাকসুর ভোটযুদ্ধ

রাত পোহালেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ইতোমধ্যেই ভোটের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
দীর্ঘ ৩৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি ভোটকেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেল পাঁচটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কেন্দ্রীয়ভাবে ফলাফল গণনা শুরু হবে। ১৭টি কেন্দ্রের ভোট ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দেয়ার চেষ্টা করা হবে বলে বুধবার (১৫ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে নির্বাচন কনিশন।
লিখিত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন তারা। তাদের মূল লক্ষ্য একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। তাই প্রতিটি ধাপে নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত রাখতে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন।
নির্বাচনে প্রার্থী এবং ভোটারের সংখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, এবারের রাকসু নির্বাচনে ২৮ হাজার ৯০১ ভোটার। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্রীয় রাকসুর ২৩টি পদে মোট ৩০৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ। সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে ১৭টি হল সংসদের ২৫৫টি পদে মোট ৫৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটারের ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ নারী, ৬০ দশমিক ৯০ পুরুষ।
অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ আরও জানান, নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত ২১২ শিক্ষকের মধ্যে ১৭ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং অবশিষ্ট শিক্ষকেরা সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া ৯১ জন কর্মকর্তা পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, দুই হাজার পুলিশ সদস্য, ছয় প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র্যাব পুরো ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। প্রতিটি ধাপে পূর্ণ নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন। নির্বাচনপ্রক্রিয়ার প্রতিটি কার্যক্রম সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ভোট গ্রহণে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হবে। অভিজ্ঞ-বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে গণনা ও ফলাফল প্রস্তুত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাকসু নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশের স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেছে। নির্বাচনে এটির কোনো প্রভাব দেখা যেতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, রাকসু নির্বাচন ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে স্থানীয়দের বিষয়টি নিয়ে তারা যথাযথভাবে প্রশাসনের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার আলোচনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু তার নিজস্ব ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহরে অবস্থিত। এখানকার জনগোষ্ঠী যারা আছেন, তারাও এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় সহযোগিতা করেন, সংশ্লিষ্ট থাকেন। ফলে স্থানীয়-অস্থানীয়—এ ধরনের কোনো বিভেদ তারা করছেন না। সবাই এখানে নির্বাচনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ইতিবাচকভাবে সহযোগিতা করছেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। রাজশাহীতে এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি হতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ১৭টি হলের জন্য ১৭টি ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। ২৮ হাজার ৯০১ ভোটারের প্রত্যেকে ছয় পৃষ্ঠার ব্যালটে ভোট দেবেন। তারা হিসাব করে দেখেছেন, সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সাত ঘণ্টা ভোট গ্রহণ হলে প্রত্যেক ভোটার ১০ মিনিট করে সময় পেলেও এই সময়েই ভোট শেষ করতে পারবেন। চারটায় ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পর পাঁচটার মধ্যে তারা গণনা শুরু করবেন। ১৭টি কেন্দ্রের ফল তারা সর্বোচ্চ ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
ডাকসু নির্বাচনে ব্যাট পেপার ছাপানোর স্থান নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। রাকসুতে ব্যালটের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভুঁইফোড় কোনো সংস্থা থেকে ব্যালট পেপার তৈরি করা হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে যাদের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের আট ধরনের সিকিউরিটি চেক (নিরাপত্তা যাচাই) করে এই দায়িত্বটি দেয়া হয়েছে। সবাইকে তাদের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, 'রাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা অনেক ধরনের ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য কিছু কথাবার্তা শুনেছি। কিন্তু আমরা বলতে চাই, কোনো অবস্থাতেই ভোটারসংখ্যার অতিরিক্ত কিংবা ভোটারসংখ্যার কম ব্যালট পেপার ছাপানোর কোনো আইন পৃথিবীতে কোথাও নেই। ২৮ হাজার ৯০১ ভোটারের জন্য ২৮ হাজার ৯০১টি ব্যালটই ছাপানো হয়েছে। এর বাইরে কেন্দ্রে একটিও কম যাবে না, একটিও বেশি যাবে না।'
ভিপি পদে লড়ছেন যারা: ভিপি পদে মূল লড়াই হতে পারে ছাত্রশিবির সমর্থিত মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও ছাত্রদল সমর্থিত শেখ নূর উদ্দীন আবীরের মধ্যে। এ দুজনই জোরাল প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। বাম সমর্থিত ফুয়াদ রাতুল এবং ছাত্র অধিকার প্যানেলের মেহেদী মারুফও আলোচনায় রয়েছেন। প্রার্থী ও প্যানেলের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থার কারণে ভিপি পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নিশ্চিত মনে হচ্ছে।
জিএস: জিএস পদে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে। শিবিরসমর্থিত ফাহিম রেজা, সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দীন আম্মার এবং ছাত্রদলের নাফিউল ইসলাম জীবন—এই তিনজনের মধ্যে লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রার্থীই নিজ নিজ শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এজিএস: এজিএস পদেও উত্তাপ কম নয়। ছাত্রদলের জাহীন বিশ্বাস এষা ও শিবিরের সালমান সাব্বিরের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই থাকায় শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে আগ্রহী এবং ভোটকেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন দেখা যেতে পারে।
Comments