শাবিপ্রবিতে র্যাগিংয়ের অভিযোগে ২৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একজন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারসহ মোট ২৫ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে ছাত্রত্ব বাতিলসহ হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ২৩৭ তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের দায়ে প্রক্টরিয়াল বডি তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে র্যাগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদানের জন্য সুপারিশ প্রদান করে। সিন্ডিকেট সভায় এ সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের ১২ জন এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩ জন শিক্ষার্থীকে সিন্ডিকেট সভায় বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হোস্টেলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়নের অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের বহিষ্কৃত ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম মুনস্তাসিরকে আজীবন ও জুনাইদ মোস্তকিম অয়নকে ৪ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বাকি ১০ শিক্ষার্থীকে ২ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তারা হলেন, বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী প্রীতম সাহা, শরিফুজ্জামান খান আতিফ, সাবিত আবরার তাজিম, অনিক আহমেদ, সুয়েল রানা, মো. যুবায়ের হোসেন তালুকদার জিম, মো. নাঈম মিয়া, বিকাশ চন্দ্র ধর, মিঞা মো. সাইয়্যেদুল বাশার রিফাত ও রাজন সাহা সানি।
গত বছরের ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫ জন নারী শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেওয়ার ঘটনায় একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ৫ জন নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর মধ্যে কাজী তাসমিয়া হক অরিশাকে ৪ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে বাকি ৪ জন ফারজানা মেহেরুন নূহ্য, তাসমিয়াহ আলম মাইশা, লামিয়া ইসমাইল জুঁই ও শ্রাবণী দে প্রিয়াকে আজীবন আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এদের মধ্যে কেউ হলে না থাকলে আগামীতে তাদেরকে কোন সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে তাদেরকে ভবিষ্যতে র্যাগিংয়ের মত কোন কর্মকাণ্ড জড়িত না হওয়া জন্য প্রক্টরিয়াল বডির কাছে মুচলেকা দেওয়ার জন্য বলা হয়।
একইভাবে গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের পাশে একটি বাসায় একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ৮ শিক্ষার্থী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠে।
এ ঘটনায় র্যাগিংয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে সাখাওয়াত হোসেন ও মো. সাগর হোসেনকে ২ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
সেই সঙ্গে একই বর্ষের শিবরাজ ত্রিপুরা, জুবায়ের আবদুল্লাহ, রিয়াদুস সালেহীন রিয়ান, তন্ময় কর্মকার সাগর, ইয়াজউদ্দিন পাটোয়ারী ও নাফিজ ইমতিয়াজ রোহানকে আবাসিক হল থেকে আজীবন বহিষ্কার অথবা হলে ভর্তি না থাকলে ভবিষ্যতে হলে সিট প্রদান না করার জন্য বলা হয়। তাদেরকেও ভবিষ্যতে র্যাগিংয়ের মত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া জন্য প্রক্টরিয়াল বডির কাছে মুচলেকা দেওয়ার জন্য বলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান বলেন, 'র্যাগিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে র্যাগিংয়ের ফলে মানসিকভাবে ট্রমাটাইজ হয়ে যায়। এতে অনেকে অ্যাকাডেমিক জায়গা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। এসব র্যাগিংয়ের ঘটনা অনেক আগের। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছি।'
Comments