পূর্ণ উৎপাদনে অনিশ্চয়তা আরএনপিএল তাপবিদ্যুতের

পটুয়াখালীর রাবনাবাদ নদীর তীরে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আরএনপিএল জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। তবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার এই কেন্দ্র এখনো পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়নি। দুটি ইউনিট প্রস্তুত থাকলেও কয়লার দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ায় চলছে কেবল একটি ইউনিট।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল দ্বিতীয় ইউনিটও সংযুক্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন সীমিত হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩০০ মেগাওয়াটে।
কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে এরমধ্যে চার দফা আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করেছে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল)। সবশেষ সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব ব্যয়বহুল হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। আবারও নতুন করে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
আরএনপিএল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্বাবাধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. আশ্রাফ উদ্দিন জানান, দেড় লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে। এছাড়া নতুন জাহাজে আরও কিছু কয়লা আসছে। এতে আপাতত উৎপাদন সচল রাখা সম্ভব হলেও পূর্ণ সক্ষমতায় চালুর অনিশ্চয়তা কাটেনি।
প্রায় ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্রটির অর্থায়নের বড় অংশ এসেছে চীন থেকে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে দেশটি। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ঋণ পরিশোধ। কিন্তু বাণিজ্যিক উৎপাদন এখনো অনিশ্চিত থাকায় এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হলে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমবে। পাশাপাশি ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা ও আমদানি ব্যয়ও হ্রাস পাবে।
বর্তমানে দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়া যায় ৭ হাজার মেগাওয়াট। এরসঙ্গে আরএনপিএলের পূর্ণ সক্ষমতা যুক্ত হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রটি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার উত্তরে, রাবনাবাদ নদীর তীরে ৯৫০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প এখন জাতীয় বিদ্যুৎ খাতে নতুন প্রত্যাশা জাগালেও দীর্ঘমেয়াদি কয়লা সরবরাহ চুক্তি না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
Comments