সিলেটে আরও সাড়ে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৬

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর চুরি ও পাথর লুটপাটের ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, ইয়ারগান ও মদসহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় আরও ৫ জনকে। এছাড়া রোববার সালুটিকর থেকে আর দু'জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এনিয়ে এখন পর্যন্ত পাথর লুটপাটের ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১১ জনে দাঁড়ালো।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ আদর্শ গ্রামের মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে কুতুব উদ্দিন ওরফে পাগলা শাহ (৫৪), উত্তরপাড়ার মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে আব্দুল ওয়াহিদ (৫৫), তার ছেলে জাহিদ আহমদ (২২), একই এলাকার আব্দুল ওয়াজেদের ছেলে রুহেল আহমদ (২৬) এবং আরেকজন সহযোগী।
জানা গেছে, অভিযানের প্রথম পর্যায়ে ভোলাগঞ্জ আদর্শ গ্রামে মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে কুতুব উদ্দিন ওরফে পাগলা শাহ'র বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বসতবাড়ি থেকে ১টি দা, ২টি ছুরি, ১টি বল্লম, ১৮০ মিলিলিটার ভারতীয় মদ এবং একটি বোতল এবং ১টি ইয়ারগান জব্দ করে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ভোলাগঞ্জ উত্তরপাড়া এলাকায় মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে মো. আব্দুল ওয়াহিদের বাড়িতে অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় ১টি বল্লম, ১টি রামদা, ১টি ছুরি ও ১টি দা জব্দ করা হয়। এ অভিযানে আব্দুল ওয়াহিদসহ তার দুই ছেলে রুয়েল আহমদ (২৫) এবং জাহিদ আহমদকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি ঢাকা জার্নালকে বলেন, 'সাদাপাথর চুরি ও লুটপাটের ঘটনায় পরিচালিত এই অভিযানে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে আজ আদালতে প্রেরণ করা হবে।'

সালুটিকরে মাটি খুঁড়তেই বের হলো ১১ হাজার ঘনফুট পাথর:
এদিকে, সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর ভাটা এলাকায় মাটিচাপা অবস্থায় অন্তত ১১ হাজার ঘনফুটেরও বেশি পাথরের জব্দ করেছে যৌথ বাহিনী। এসময় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আটক দুইজনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
রোববার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে আশিক মাহমুদ কবিরের নেতৃত্বে অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। অভিযানে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
অভিযানের এক পর্যায়ে ধোপাগুল সংলগ্ন সালুটিকর ভাটা এলাকায় একটি ক্রাশার মিলের আঙ্গিনায় মাটিচাপা অবস্থায় পাথরের সন্ধান পায়। জব্দকৃত পাথরের পরিমান আনুমানিক ১১ হাজার ঘনফুট হতে পারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জাফলংয়ে ১৫শ' ঘনফুট পাথর উদ্ধার, ৫০টি নৌকা ধ্বংস:
এদিকে, রোববার সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং জুমপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ১৫শ' ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেগুলো জুমপাড় জাফলং জিরো পয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হয়।

সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, মো. ফরহাদ উদ্দিনের নেতৃত্বে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত এখানে অভিযান চলে। অভিযানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এর জন্য কমপক্ষে ৫০টির নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে।
গত বুধবার (১৩ আগস্ট) থেকে লুট ঠেকাতে ও পাথর উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে নামে প্রশাসন। গত চার দিনে প্রায় পৌণে পাঁচ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকেই প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় সাদাপাথর এলাকায় শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এতে জড়িত ছিলেন। শত শত নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পাথর পরিবহন করা হয়েছে।
Comments