ইরানকে সমর্থন করায় সরকারের সমালোচনার মুখে দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাপ্রধান

দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাপ্রধান জেনারেল রুদজানি মাফওয়ানিয়া ইরান সফরের সময় করা বক্তব্যের পর নিজ দেশের সরকারের সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন।
সম্প্রতি তিনি তেহরানে গিয়ে 'ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামরিক লক্ষ্য অভিন্ন' মন্তব্য করেন। মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন আফ্রিকান দেশটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় শুল্কের মুখে পড়েছে।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটি দেশটির ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য মে মাসে হোয়াইট হাউসেবৈঠক করা সত্ত্বেও এটি ঘটেছে।
ইরানে সেনাপ্রধান কী বললেন?
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস টিভি এবং তেহরান টাইমস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তেহরানে ইরানি সেনাপ্রধান মেজর-জেনারেল সাইয়্যেদ আবদোলরহিম মুসাভির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মাফওয়ান্যা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রতি ইরানের ঐতিহাসিক সমর্থনের কথা স্মরণ করে কমান্ডার মাফওয়ান্যা বলেছেন, এই সম্পর্ক দুটি দেশের মধ্যে একটি স্থায়ী বন্ধন তৈরি করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এবং ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্য একই। আমরা সর্বদা বিশ্বের নিপীড়িত ও অরক্ষিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
তেহরান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধান মাফওয়ান্যা ইসরায়েলের 'খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমা হামলা' এবং 'অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান আগ্রাসন'-এর নিন্দাও করেছেন।
ম্যাপওয়ান্যার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, তার এই সফর একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। তিনি বলেন, 'ইরানের শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য এটি সর্বোত্তম সময়ে এসেছে।'
অন্যদিকে জেনারেল মুসাভি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে 'জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থার' বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যার মামলার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই প্রচেষ্টা ইরানের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সেনাপ্রধান ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সামরিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে 'আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি লঙ্ঘন' বলে নিন্দা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ইরানের সেনাবাহিনী 'নতুন আগ্রাসনের ক্ষেত্রে আরও নির্ণায়ক প্রতিক্রিয়া' দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?
গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার কার্যালয় জানিয়েছে, জেনারেল মাফওয়ানিয়ার ইরান সফর সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট অবগত ছিলেন না। যদিও এই ধরনের সফর সাধারণত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হয়, প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে নয়।
রামাফোসা ২০২১ সালে মাফওয়ান্যাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। এই জেনারেল বর্ণবাদ-যুগের দক্ষিণ আফ্রিকায় আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর সেনা শাখায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এটি একটি মুক্তি আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল।
প্রেসিডেন্সির মুখপাত্র ভিনসেন্ট ম্যাগওয়েনিয়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সংঘাতের এই তীব্র সময়ে কেউ বলতে পারে, এই সফরটি অযৌক্তিক ছিল। জেনারেলের তার মন্তব্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে সতর্ক থাকা উচিত ছিল।'
তিনি আরও বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাণিজ্য সম্পর্ককে এমনভাবে ভারসাম্যপূর্ণ করার চেষ্টা করছি, যাতে বাণিজ্য সম্পর্ক পারস্পরিকভাবে উপকারী হয়।
গত বুধবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রাজনৈতিক ও নীতিগত বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে... জেনারেল ফিরে আসার পর প্রতিরক্ষা ও সামরিক প্রবীণ মন্ত্রী তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার জোট সরকার গঠনকারী চারটি দলের মধ্যে একটি ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ) দল 'গুরুতর অসদাচরণ এবং দক্ষিণ আফ্রিকান জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘনের' অভিযোগে সেনাপ্রধানের সামরিক আদালতে বিচারের দাবি জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এটি বর্তমান সময়টিকে বিশেষভাবে সংবেদনশীল করে তুলেছে। কারণ জুনে ইরান এবং মার্কিন-ইসরায়েল জোটের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ হয়েছে।
এদিকে, জেনারেল মাফওয়ান্যা তার মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি।
Comments