ইরানের সঙ্গে সংঘাতে সৌদি আরবকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র

গত জুন মাসে ইসরায়েলি শহরগুলোতে ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর মার্কিন-নির্মিত 'থাড' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সঙ্কট দেখা দেয়। এ অবস্থায় ইসরায়েলকে 'থাড' থেকে নিক্ষিপ্ত ২০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবারহের জন্য সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদের প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত মার্কিন সূত্রের বরাতে শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'যুদ্ধের সময়, আমরা সবাইকে অনুদান দিতে বলেছিলাম। যখন তা কাজ করেনি, তখন আমরা চুক্তি করার চেষ্টা করেছি। শুধু একটি দেশেই এই লক্ষ্য (অস্ত্র পাঠাতে রাজি করানো) ছিল না।'
মিডল ইস্ট আই'র প্রতিবেদন অনুসারে, সৌদি আরব ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য যথেষ্ট 'উপযুক্ত অবস্থানে' ছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বুঝাতে চেয়েছে, ইরান ইসরায়েলের পাশাপাশি তাদের জন্যও হুমকি।
তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই রাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই 'থাড' বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে হুথিরা ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে দেশটিতে।
ইরান ও ইসরায়েল যখন নিজেদের মধ্যে লড়াই করছিল, তখন সৌদি আরব তাদের নিজস্ব সার্বভৌম তহবিল দিয়ে কেনা প্রথম 'থাড' ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর মাত্র নয় দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সামরিক বাহিনী এটি উদ্বোধন করে।
উদ্বোধনের ঠিক আগে মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, ইসরায়েলে ইরানের বিশাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে মার্কিন 'থাড' ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ ভয়াবহ পর্যায়ে কমে আসবে।
মিডল ইস্ট আই প্রথম রিপোর্ট করেছিল, ইসরায়েলে থাকা মার্কিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী গোলার মজুদ এবং ইসরায়েলের অ্যারো'র অস্ত্রাগার দ্রুত কমে যাচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং দ্য গার্ডিয়ান পরে একই ধরণের প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
জুলাই মাসে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের গোলার মাত্র ২৫ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল। পেন্টাগন এটিকে বিশ্বব্যাপী সমস্ত মার্কিন সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন।
গোলার মজুদ কমার মধ্যে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য শেষমেশ যুক্তরাষ্ট্র 'আর্লে বার্ক' শ্রেণীর গাইডেড-ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রয়ারে স্থাপিত স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ নিক্ষেপ করে।
ইসরায়েলের ত্রিস্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিরিক্ত মার্কিন অস্ত্রশক্তি দিয়ে সজ্জিত হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত ইরান শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ফেলতে সক্ষম হয়। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরাসরি পাঁচটি ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের হামলার মাত্রা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু সামরিক পরিকল্পনাকারীদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালোভাবে টিকে ছিল। কিন্তু ইরান ওইসব ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল, বিশেষ করে যখন সংঘাত দীর্ঘায়িত হচ্ছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বার্কি পূর্বে মিডল ইস্ট আইকে বলেছিলেন, আমাদের কাছে খুব বেশি ইন্টারসেপ্টর এবং সেগুলো তৈরির ক্ষমতা নেই।
এদিকে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও শুক্রবার জানিয়েছে, কিছু মার্কিন কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিয়ে ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
আরেকজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, সৌদি আরব মার্কিন 'ভদ্র প্রস্তাব এবং চুক্তি সম্পাদনের প্রচেষ্টা' প্রত্যাখ্যান করার পরে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তাই বলেছেন, আমেরিকা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ইসরায়েলের সঙ্গে মিসাইল ভাগাভাগি করতে বলেছে। তবে কেউ মার্কিন অনুরোধে সাড়া দিয়েছে কিনা, সেটি কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ইরানের সাফল্য উপসাগরীয় দেশগুলো বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করেছে। এই কারণে হয়তো ইসরায়েলের সঙ্গে মিসাইল ভাগাভাগি করার মার্কিন প্ররোচনার ফাঁদে কেউ পা দেবে না।
Comments