ঘুমের সঠিক নিয়ম জানালেন চিকিৎসক

আপনি কি পাশ ফিরে ঘুমাতে পছন্দ করেন, নাকি হয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমান? শুনতে সাধারণ মনে হলেও ঘুমের এই অভ্যাসই শরীরের ওপর ফেলতে পারে বড় প্রভাব। হজম থেকে শুরু করে শ্বাস-প্রশ্বাস, এমনকি মেরুদণ্ডের অবস্থান পর্যন্ত অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে আপনি কীভাবে ঘুমান। তাই কোন ঘুমের ভঙ্গি আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো, আর কোনটা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার কারণ হতে পারে তা জানা জরুরি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে ভারতীয় পালমোনোলজিস্ট ডা. বিকাশ মিত্তল জানান, ঘুমের সঠিক ভঙ্গির সঙ্গে সুস্থতার সম্পর্ক রয়েছে। ভুলভাবে ঘুমালে শরীরের নানান ধরনের ক্ষতি হতে পারে এমনি বিভিন্ন রোগেও ভুগতে হতে পারে অনেক সময়।
ঘুমানোর সঠিক ভঙ্গি: ডা. বিকাশ মিত্তল বলেন, পাশ ফিরে ঘুমানো বেশিরভাগ মানুষের জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ভঙ্গি। এটি ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট কমায়, মেরুদণ্ডকে সঠিকভাবে সাপোর্ট করে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা ঘুমের সময় শ্বাসরোধের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘদিন একদিকে পাশ ফিরে ঘুমালে কাঁধ বা কোমরে চাপ পড়ে এবং মুখে বলিরেখা দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে চিৎ হয়ে ঘুমানো হলে মাথা, ঘাড় ও মেরুদণ্ড স্বাভাবিক ভঙ্গিতে থাকে, যা জয়েন্টের ওপর চাপ কমায় এবং মুখের বলিরেখাও কম হয়। তবে এটি অনেক সময় ঘুমের সময় শ্বাসরোধ বা নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ায়। বিশেষ করে যাঁরা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ভঙ্গি উপযুক্ত নয়। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের জন্য চিৎ হয়ে ঘুমানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এতে গর্ভে রক্তপ্রবাহ কমে যেতে পারে।
বাম না ডানদিকে পাশ ফিরে ঘুমানো ভালো: অনেকে বাম পাশ ফিরে ঘুমান আবার কেউ ডান। এ বিষয়ে ডা. মিত্তল বলেন, ঘুমের সময় কোন দিকে পাশ ফিরে শোয়া হচ্ছে—তাও গুরুত্বপূর্ণ। বাম পাশে ঘুমানো হজমের জন্য উপকারী। এতে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড উপরে উঠতে পারে না এবং পেট পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও বাম পাশে ঘুমানো রক্তপ্রবাহ ভালো রাখে। তবে ডান দিকে ঘুমালে কিছু ক্ষেত্রে লিভারের ওপর চাপ পড়তে পারে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনা বাড়ে। যদিও কিছু হৃদ্রোগী ডান দিকে ঘুমালে বেশি স্বস্তি পান।
কারা কোন ঘুমের ভঙ্গি এড়িয়ে চলবেন: ঘুমের ভঙ্গিমা নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর। যেমন—স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীরা চিৎ হয়ে ঘুমানো এড়িয়ে চলবেন, অ্যাসিড রিফ্লাক্স রোগীরা বাম পাশে শোবেন, গর্ভবতী নারীরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে চিৎ হয়ে ঘুমাবেন না, এবং কাঁধ বা কোমরের ব্যথায় ভোগা ব্যক্তিরা পাশে ঘুমানোর সময় সঠিক সাপোর্টিং বালিশ ব্যবহার করবেন।
ঘুম শুধু বিশ্রামের মাধ্যম নয়, এটি শরীর ও মনের সুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনি কীভাবে ঘুমান, তার ওপর নির্ভর করে আপনার সারাদিনের শক্তি, হজম, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং এমনকি ত্বকের অবস্থাও। তাই ঘুমের ভঙ্গিমা বেছে নেওয়ার সময় নিজের শারীরিক অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি আরামদায়ক বিছানা ও সঠিক উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করাও ভালো ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের চাবিকাঠি।
Comments