টাঙ্গুয়ার হাওরে গানের সুরে ভাসে তিন ক্ষুদে শিল্পীর স্বপ্ন

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর-দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এক পরিচিত নাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই হাওর বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, এখন এখানে যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। হাওরের বুক চিরে চলা নৌকায় ভেসে বেড়ানো পর্যটকরা এখন শুধু প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যই উপভোগ করেন না, শোনেন প্রাণভরা গান, যা আসে তিন ক্ষুদে শিল্পীর কণ্ঠে-তুহিন, ওয়ালিদ ও বাঁধন।
তারা কেউ পেশাদার গায়ক নয়, নেই কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। তবুও তাদের গানের সুরে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে গোটা নৌকা। তাহিরপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের সন্তান এই তিন শিশু গানের মাধ্যমে যেন প্রাণ জাগিয়ে তোলে পুরো হাওরকে। কখনো আধুনিক গান, আবার কখনো লোকগানের ঐতিহ্যবাহী সুরে তারা দর্শনার্থীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
এই তিন শিশু কখনো আধুনিক গান, আবার কখনো লোকগানের সুরে মুগ্ধ করে তোলে সবাইকে। তাদের কণ্ঠে শোনা যায় 'আমার মন বসে না শহরে, ইট-পাথরের নগরে, তাইতো আইলাম হাওরে'- এধরনের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গান। আবার কখনো জনপ্রিয় প্রেমের গান 'ওই লাল টুক-টুক শাড়ি পড়া মাইয়া আমার মন প্রাণ সবি নিসে কাইরা, আমার ভালবাসার ময়না পাখি টিয়া তোমায় ভালবাইসা করমু আমি বিয়া... আবার কখনও কখনও 'সোনা বন্ধু তুই আমারে...সোনা বন্ধু তুই আমারে করলি রে দিওয়ানা, মনেতো মানে না দিলে তো বুঝে না...' গেয়ে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের বিনোদন দিয়ে থাকেন।
তুহিন আবুল কালামের ছেলে, ওয়ালিদ কামাল মিয়ার এবং বাঁধন শাহীন মিয়ার সন্তান। তারা এখন নিয়মিত গান গেয়ে হাওরে আসা পর্যটকদের আনন্দ দেয়, মুগ্ধ করে। তবে তাদের গানে বিশেষভাবে স্থান পায় সুনামগঞ্জের দুই কিংবদন্তি শিল্পী-মরমী সাধক দেওয়ান হাসন রাজা ও বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের কালজয়ী গান।
তাদের গাওয়া ঐতিহ্যবাহী গানগুলো যেন পর্যটকদের স্মরণ করিয়ে দেয় বাংলার শেকড়, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য। সেই সঙ্গে এই ক্ষুদে শিল্পীদের গায়কি পরিবেশনা শুধু বিনোদন নয়, হয়ে উঠছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চা-যা প্রজন্মান্তরে সুরে সুরে বয়ে নিয়ে যাবে স্থানীয় ঐতিহ্য।
পর্যটকদের অনেকে গান শুনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের হাতে তুলে দেন কিছু টাকা-যা এই শিশুদের প্রেরণা জোগায়, আবার পরিবারে সামান্য হলেও সাহায্য করে। স্থানীয়রা বলেন, 'এই বাচ্চাগুলোর গান টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্যকে যেন আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। '
এই তিন ক্ষুদে গায়কের গান এখন শুধু হাওরের জলের ঢেউ নয়, হয়ে উঠেছে টাঙ্গুয়ার হাওরের নতুন পরিচয়-একটি জীবন্ত সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক ওমর ফারুক বলেন,'এই তিন শিশুর গান শুনে আমিসহ সবাই মুগ্ধ। তারা কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই হাততালি দিয়ে গানে সুর দিচ্ছেন, সত্যি অসাধারণ।'
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে আসা পর্যটক সালমা আক্তার বলেন, 'বাচ্চারা এই অল্প বয়সে খুব ভালো গান গাইছে, তাদের যত্ন নেওয়া উচিত। এদেরকে ভালো একটা জায়গায় নিয়ে গানের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন বলেও দাবি জানান তিনি।'
সুনামগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল বলেন,'হাওরে প্রায়সময়ই দেখা যায় শিশুরা গান গেয়ে পর্যটকদের মুগ্ধ করে তুলে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা সেই বিষয়টা দেখবো।'
Comments