আইএমএফ সংস্কারে প্রথমবার একমত হয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণা

ব্রিকস জোটভুক্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সংস্কারের পক্ষে একক ও ঐক্যবদ্ধ প্রস্তাব দিয়েছেন। শনিবার (৫ জুলাই) ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর দেয়া এই যৌথ বিবৃতিটি এই প্রথমবারের মতো ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আইএমএফ সংস্কার নিয়ে একটি অভিন্ন অবস্থানকে তুলে ধরা হয়। 

অর্থমন্ত্রীদের এ প্রস্তাব ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইএমএফ পর্যালোচনা বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে, যেখানে কোটার নিয়ম-কানুন, সদস্যদেশগুলোর অবদান এবং ভোটাধিকার পুনর্বিন্যাস নিয়ে আলোচনা হবে।

 বিবৃতিতে বলা হয়েছে - 'কোটার পুনঃবিন্যাস বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সদস্য দেশগুলোর আপেক্ষিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করা উচিত, একইসঙ্গে দরিদ্রতম সদস্যদের কোটাও রক্ষা করতে হবে।' খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ডের।

তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোটার পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে একটি নতুন কোটানির্ধারণ ফর্মুলার কথা বলেছেন, যেখানে প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদন এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে হিসাব করা হবে।

ব্রাজিলের এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, আলোচনার সময় ব্রিকস দেশগুলো এমন একটি ফর্মুলা চেয়েছে, যা বিভিন্ন মুদ্রার আপেক্ষিক মানকেও বিবেচনায় নেবে এবং স্বল্পআয়ের দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব আরও জোরদার করবে।
 
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেও আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের 'জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্ট'-এর মতো পশ্চাৎপদ প্রথা এখনকার বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে আর মানানসই নয়।' 

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি অঘোষিত চুক্তি অনুসারে, আইএমএফ-এর নেতৃত্বে একজন ইউরোপীয় এবং বিশ্বব্যাংকে একজন আমেরিকান থাকেন। ব্রিকস দেশগুলো এটিকে পরিবর্তনের দাবি তুলেছে।

অর্থমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল— ব্রিকস-প্রতিষ্ঠিত নতুন উন্নয়ন ব্যাংক (এনডিবি)-এর অর্থায়নে একটি নতুন গ্যারান্টি মেকানিজম গঠনের আলোচনা। এই গ্যারান্টি কাঠামোর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং অর্থায়নের খরচ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্রিকস জোটে গত বছর ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে— মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। ফলে উন্নয়নশীল দেশের হয়ে কথা বলার কূটনৈতিক সক্ষমতা আরও বেড়েছে। 

রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত এই অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক আগামী ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার নিয়ে আরও জোরালো আলোচনার প্রত্যাশা রয়েছে।