যে কারণে পঞ্চায়েত সিজন-৪ কেন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

সিজন-৩ এর ব্যাপক সাফল্যের পর পর্দায় ফিরেছে 'পঞ্চায়েতের' চতুর্থ সিজন। এটির মুক্তির অপেক্ষায় ছিল লাখো ভক্ত অনুরাগী। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ভক্তদের মনে কতটুকু জায়গা নিতে পেরেছে 'পঞ্চায়েতের' চতুর্থ সিজন?
গুলি করা হয়েছে পঞ্চায়েত প্রধানকে, কিন্তু কে করেছে এই গুলি? এই প্রশ্ন রেখেই শেষ হয়েছিল সিজন থ্রি, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছে সিজন ফোর, তবে সিজন ফোর শেষ হলেও এই প্রশ্নের উওর এখনো মেলেনি। উল্টো এপিসোড ওয়ান থেকে এপিসোড এইট, পুরো সিজন পার হয়েছে কেবলমাত্র ইলেকশন নিয়ে।
একটা আদর্শ গ্রাম বলতে আমরা কী বুঝি, গ্রামের মানুষের সরলতা, ছোট ছোট সমস্যাকে খুব পিকুলিয়ারভাবে সমাধান করার চেষ্টা, সবার মধ্যে একটা আত্মিক বন্ধন, সেই সব চিরায়ত বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে নির্মাতা চেয়েছেন একটু ট্রিকি ওয়েতে বড় এঙ্গেলে গল্প বলার । আর সেটা করতে গিয়েই নির্মাতা পুরো সিজনে জুড়ে দিল ইলেকশন আর ভিলেজ পলিটিক্সের জটিলতা। ফলাফল ফানি মোমেন্টস গেল কমে, আর গল্পের ভেতর ঢুকে পড়লো কর্মাসিয়াল মুভির হার্ড কোর সিরিয়াসনেস।
এই সিজনের সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হল সচীব জি, বিকাশ, প্রহ্লাদ এবং প্রধান জি-র মধ্যে যে বন্ধুত্ব এবং চরিত্রিক বন্ধন ছিল, তা একেবারেই ফিকে হয়ে গেছে । মাঝপথে প্রহ্লাদ এবং বিকাশকে কেন্দ্র করে অবশ্য একটা ছোট আবেগঘন সাব-প্লট রয়েছে, কিন্তু সেটাও মনে হয়েছে একদম জোর করে জুড়ে দেয়া। আরেকটা বিষয় হলো আগের সিজনে মনে হয়েছিল এই সিজনে এসে রিংকি আর সচিব এর প্রেমটা জমে যাবে কিন্তু আমরা ভাবলে আর কী হবে, নির্মাতার ফর্দ অনুযায়ী এক ইঞ্চিও এগোয়নি তাদের সম্পর্ক। বিশেষ করে প্রথম চারটা এপিসোডে এই দুজনের সম্পর্কের সমীকরণ একেবারে নেই বললেই চলে, কিন্তু কথায় আছে না মধুরেণ সমাপয়েৎ? তাই ৫ম এপিসোডে এসে ভোরের আলোর মতো উকি দেয় তাদের রসায়ন। যদিও সেটা খুবই কম সময়ের কিন্তু মোমেন্টসগুলো ছিল খুবই সুন্দর।
তবে এই সিজনে বিনোদ একমাত্র চরিত্র যে, সেই পুরনো ফুলেরাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রধানজির বাড়িতে ভরপেট লুচি তরকারি খাওয়ার পর বিনোদ যখন বুঝতে পারে তাঁকে ভালোবেসে নয়, দল পাল্টানোর জন্য আপ্যায়ন করা হয়েছে তখন খুব আবেগী হয়ে সে বলে,'ম্যায় গরিব হো সকতা হু পর গদ্দার নেহি' এমন অনুভবের জায়গা এই সিরিজে খুব কমই দেখা গেছে।
তবে গল্প কিছুটা দুর্বল হলেও পুরো সিজন জুড়ে কারো অভিনয় নিয়ে মনে হয় না কেউ কমল্পেইন করবে। প্রত্যেকেই নিজের সবটুকু দিয়ে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তবুও বলতে হচ্ছে, পঞ্চায়েতের যারা ডাইহার্ট ফ্যান, তারা অবশ্যই দেখে বুঝতে পারবেন, সেই আগের ফুলেরা গ্রাম আর নেই, মানুষের মধ্যে সেই সিম্ফলিসিটি, সেই ইনোসেন্স বিষয়টা গল্পের ঘুর্নিপাকে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ।
২০২০ সালে প্রকাশ পাওয়া 'পঞ্চায়েত' সিরিজটির গল্প আবর্তিত হয় একজন ইঞ্জিনিয়ার অভিষেক ত্রিপাঠীর (জিতেন্দ্র কুমার) চারপাশে, যিনি চাকরির অভাবে ফুলেরা গ্রামে পঞ্চায়েত সচিব হিসেবে যোগ দেন। সেখানকার সরল গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে তার ধাক্কাধাক্কি, মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম এবং মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্কই সিরিজটির মূল আকর্ষণ। 'সিজন ৩' শেষ হয় একাধিক টানটান উত্তেজনার দৃশ্য দিয়ে, যেখানে নতুন প্রশাসনিক টানাপোড়েন এবং গ্রামের রাজনৈতিক পালাবদলের ইঙ্গিত মিলেছিল।
পঞ্চায়েতের চতুর্থ সিজনে সানভিকার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন জিতেন্দ্র কুমার, রঘুবীর যাদব, নীনা গুপ্তা, ফয়সাল মালিক, চন্দন রয়, সুনীতা রাজওয়ারসহ আরও অনেকে। পরিচালনায় রয়েছেন দীপক মিশ্র এবং প্রযোজনা করেছে টিভিএফ প্রোডাকশন।
Comments