রাতে ভালো ঘুম না হলে থাকছে মৃত্যুর ঝুঁকি

ঘুম মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন। ঘুম হচ্ছে শারীরবৃত্তীয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেউ হয়তো অবসর বা বিশ্রামের মাধ্যম মনে করেন ঘুমকে। তবে এই ঘুমই জরুরি। ঘুমের মধ্যেই শরীর বিভিন্ন জরুরি কাজ সম্পন্ন করে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে।
তবে সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। জরুরি এই ঘুমই যদি ভালো না হয়, তাহলে মন ও মেজাজ খারাপ হয়। ঘুম না হওয়ার সমস্যা থাকলে বিষয়টি চিন্তার। এ কারণে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং বিষন্নতার মতো ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি মানুষের মৃত্যুও হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ভালো ঘুম না হলে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রা ক্ষতির মুখে পড়ে।
এ ব্যাপারে ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. হরদত্ত কারান্দে জানিয়েছেন, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমসম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাধির সাধারণ লক্ষণগুলো জোরে নাক ডাকা এবং গড়গড় করা। তবে এটি স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের ঘুমহীন রাত কাটানোয় ক্ষতি করে।
এ চিকিৎসক বলেন, মধ্যবয়সী পুরুষদের ৫০ শতাংশ এবং ৫০ বছর বয়সী বা তার বেশি বয়সী ২০ শতাংশ নারীদের ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়া সংকীর্ণ বায়ু চলাচলের জন্য ঘটে। যা পর্যাপ্ত অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করতে দেয় না। এটি মূলত অধিক স্বাস্থ্যতার কারণে হয়। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত রোগী যখন গভীর ঘুমে থাকেন, তখন তার বায়ু চলাচল বন্ধ হয় এবং কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাস নেয়া বন্ধ হয় তার। পরবর্তীতে অক্সিজেনহীন মস্তিষ্ক তাকে কিছুটা জাগিয়ে তোলে, এতে ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি ফের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অবস্থান পরিবর্তন করেন। ফলে নাক ডাকা শুরু হয়।
এ প্রক্রিয়া সারা রাতে অন্তত ৪০ বার হয়ে থাকে। এই সমস্যা যখন দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয় এবং শরীরে অক্সিজেনের ক্রমাগত ঘাটতি দেখা দেয়, তখন এটি স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণকে ট্রিগার করে। ফলস্বরূপ হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন ডা. হরদত্ত।
তিনি বলেন, এত ভয়াবহ পরিণতির পরও স্লিপ অ্যাপনিয়া এখনো অপ্রচলিত রোগ। কেননা, আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ চিকিৎসা সহায়তা পান। যাদের এই রোগ শনাক্ত হয় তারাও এটিকে অবহেলা করেন, যতক্ষণ না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। সাধারণত হার্ট অ্যাটাক বা দিনের বেলা ঘুমের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ঘটে।
মাদরাজ ইএনটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. মোহন কামেশ্বরন বলেন, অনেক রোগী মনে করেন যে, ঘুমের ওষুধ বা অ্যালকোহল রাতের আরামদায়ক ঘুমের নিশ্চয়তা দিতে পারে। কিন্তু এটি বিপরীতে মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। ওষুধ সেবনের কারণে ঘুমের সময় মস্তিষ্ক রোগীর শ্বাস বন্ধ হলে তাকে সতর্ক করতে সক্ষম হবে না। এ থেকে মৃত্যুও হতে পারে। তবে ঘুমের যেকোনো সমস্যায় কালক্ষেপণ না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
Comments