লিভারের যত্নে যেসব খাবার ভালো

লিভার আমাদের দেহের প্রাকৃতিক ডিটক্স সেন্টার। এটি টক্সিন ছেঁকে ফেলা, চর্বি ভাঙা, হরমোন ব্যালান্স করা এবং পুষ্টি শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুশ্চিন্তা, মদ্যপান, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে লিভার সহজেই ক্লান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই লিভারের সুস্থতায় খাবার বেছে নেওয়াটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট। চলুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, আর কোনগুলো চুপিচুপি লিভার নষ্ট করে দিচ্ছে।
লিভারের জন্য ভালো যেসব খাবার:
পাতাযুক্ত সবজি: পালং, কালে, মেথি এগুলোতে থাকে ক্লোরোফিল, যা লিভার থেকে ভারী ধাতু ও টক্সিন বের করে দেয়। এছাড়া, বাইল (পিত্তরস) উৎপাদন বাড়িয়ে বর্জ্য অপসারণেও সহায়তা করে।
রসুন: রসুনে থাকা অ্যালিসিন ও সেলেনিয়াম লিভারের এনজাইম সক্রিয় করে, যা টক্সিন দূর করে। প্রতিদিন ১–২টি কাঁচা বা হালকা রান্না করা রসুন খাওয়া উপকারী।
বিটরুট: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটেইন সমৃদ্ধ বিট লিভারের চর্বি জমা রোধ করে এবং ডিটক্স এনজাইম উৎপাদনে সাহায্য করে।
হলুদ: হলুদের উপাদান কারকিউমিন লিভারের প্রদাহ কমায় ও বাইল উৎপাদন বাড়ায়। এর সঙ্গে সামান্য গোলমরিচ খেলে শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
অ্যাভোকাডো: গ্লুটাথায়ন সমৃদ্ধ এই সুপারফুড লিভার থেকে টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে এবং টক্সিন-জনিত ক্ষতি কমায়।
আপেল: আপেলের পেকটিন টক্সিন ও ভারী ধাতু শোষণ করে লিভারে অতিরিক্ত চাপ পড়তে দেয় না।
গ্রিন টি: ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই চা লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। তবে দিনে ৩–৪ কাপের বেশি না খাওয়াই ভালো।
ক্রুসিফেরাস সবজি: ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি প্রভৃতি সবজি এনজাইম উৎপাদনে সহায়তা করে যা ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ।
লেবুজাতীয় ফল: ভিটামিন সি গ্লুটাথায়ন তৈরিতে সাহায্য করে, যা লিভার থেকে টক্সিন বের করে। সকালে গরম পানিতে লেবুর রস খাওয়াটা দারুণ একটি অভ্যাস।
আখরোট: ওমেগা-৩ ও গ্লুটাথায়নে ভরপুর আখরোট রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে লিভারকে চাপমুক্ত রাখে।
লিভারের ক্ষতির কারণ যেসব খাবার
মদ/অ্যালকোহল: লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি বিপাক প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকর উপপাদার্থ তৈরি করে, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে ও লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তেলেভাজা ও ফাস্ট ফুড: বাজারের বার্গার, ফ্রাই, নাগেট এসব ট্রান্স ফ্যাট, রিফাইন্ড কার্ব ও সোডিয়ামে ভরপুর যা লিভারে চর্বি জমিয়ে দেয়।
চিনি ও সফট ড্রিংকস: অতিরিক্ত চিনি, বিশেষ করে ফ্রুকটোজ, লিভারে চর্বি জমার মূল কারণ। কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসে এগুলোর পরিমাণ অনেক বেশি।
প্রক্রিয়াজাত মাংস: বেকন, সসেজ, প্রসেসড মিটে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও নাইট্রেটস লিভারে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়।
প্যাকেটজাত স্ন্যাকস ও বেকড আইটেম: চিপস, বিস্কুট, কুকি প্রভৃতিতে থাকা হাইড্রোজেনেটেড অয়েল ও কেমিক্যাল লিভারে চর্বি জমিয়ে দেয় এবং ডিটক্স কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়।
লিভারকে ভালো রাখতে মনে রাখুন:
* দামি 'ডিটক্স ড্রিংক' নয়, বরং ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক খাবারই যথেষ্ট
* দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন
* প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে তাজা ফল, সবজি ও ঘরে তৈরি খাবার খেতে চেষ্টা করুন
* মাঝে মাঝে "না" বলুন অতিরিক্ত চা, কফি, মদ বা কোমল পানীয়কে
আপনার লিভার ২৪ ঘণ্টা আপনাকে সুস্থ রাখতে কাজ করছে সুতরাং এটিকে একটু ভালোবাসা দিন খাবারের মাধ্যমে। একটা স্বাস্থ্যবান লিভার মানেই আপনি আরও বেশি কর্মক্ষম, ফিট ও আনন্দময়।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
Comments