গাজায় প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত: চাঞ্চল্যকর তথ্য ইসরায়েলি মিডিয়ার

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার যুদ্ধে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই সংখ্যা অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪%। শুক্রবার (২৭ জুন) ইসরায়েলি সংবাদমাদ্যম হারেৎজ এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ নিহতের সংখ্যার সঙ্গে এটির বেশ পার্থক্য দেখা যায়। মন্ত্রণালয় সবশেষ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।

হারেৎজ পত্রিকা জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাব যেমন: ক্ষুধা, ঠান্ডা এবং রোগ-ব্যাধির কারণেও অনেক মানুষ মারা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি মুখপাত্র, সাংবাদিক এবং প্রভাবশালীরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত মৃতের সংখ্যাকে 'অতিরঞ্জিত' বলে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তবে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (নিহতের) তালিকাটি কেবল নির্ভরযোগ্যই নয় - বরং বাস্তবতাকে সম্ভাব্যভাবে অবমূল্যায়নও করা হতে পারে।

হারেৎজের প্রতিবেদনে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলোওয়ে কলেজের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাইকেল স্পাগাটের গাজায় মৃত্যুর বিষয়ে পরিচালিত একটি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি সহিংস সংঘাতে মৃত্যুহার নিয়ে বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞ।

তার এই সমীক্ষায় গাজায় ২০০০ পরিবারের ওপর জরিপ করা হয়েছিল, যার মধ্যে প্রায় ১০০০০ মানুষ ছিল। গবেষণায় বলা হয়েছে, '২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুদ্ধের সময় গাজায় প্রায় ৭৫ হাজার ২০০ জন সহিংস মৃত্যুবরণ করেছে, যার বেশিরভাগই ইসরায়েলি যুদ্ধাস্ত্রের কারণে ঘটেছে।'

জরিপের তথ্য অনুসারে, নিহতদের ৫৬% হয় ১৮ বছরের মধ্যে থাকা শিশু অথবা নারী।

হারেৎজ উল্লেখ করেছে, 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রায় প্রতিটি সংঘাতের সঙ্গে তুলনা করলে এটি একটি ব্যতিক্রমী পরিসংখ্যান।'

অধ্যাপক মাইকেল স্পাগাট বলেন, জরিপের তথ্য অনুসারে গাজা যুদ্ধ 'একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতগুলোর মধ্যে একটি'।

হারেৎজের তথ্য আরও দেখায়, গাজায় সহিংসতার মাধ্যমে নিহত নারী ও শিশুদের অনুপাত কসোভো (২০%), উত্তর ইথিওপিয়া (৯%), সিরিয়া (২০%) এবং সুদানসহ (২৩%) প্রায় প্রতিটি সাম্প্রতিক সংঘাতের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

অধ্যাপক স্পাগাট বলেন, 'আমি মনে করি, সম্ভবত মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশের মতো নিহত হয়েছে। আমি নিশ্চিত নই যে, একবিংশ শতাব্দীতে আর কোনো ঘটনা এই মাত্রায় পৌঁছেছে।'

আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অঞ্চলটির ওপর যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।