পেঁয়াজ খাওয়া উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

শুনতে অবাক লাগলেও অনেকেই জানেন না যে পেঁয়াজ একটি সবজি। রান্নায় ঝাঁজ ও স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি পেঁয়াজ শরীরের জন্যও দারুণ উপকারী। আপনি যদি পেঁয়াজ খেতে ভালোবাসেন, তাহলে জেনে রাখুন এই সবজি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে হতে পারে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন। ইটিংওয়েলের এক প্রতিবেদনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরছে পেঁয়াজ খাওয়ার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, কিছু সতর্কতা এবং পেঁয়াজ উপভোগ করার সেরা উপায়।
পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা: পুষ্টিবিদরা পেঁয়াজ খাওয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা বেশকিছু উপকারিতা সামনে এনেছেন এগুলো হলো:
১. হজমে সহায়তা করে: পেঁয়াজে থাকা ইনুলিন নামক প্রিবায়োটিক উপাদান উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যা হজমশক্তি ভালো রাখে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
২. হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা: পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোয়ারসেটিন রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রদাহ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।
৩. চোখের যত্নে: পেঁয়াজে থাকা সালফার গ্লুটাথায়ন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা চোখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ক্যাটার্যাক্ট ও গ্লুকোমার ঝুঁকি কমায়।
৪. ক্যানসার প্রতিরোধে: পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সালফার যৌগ কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে, যেমন—ফুসফুস, প্রোস্টেট, পাকস্থলী ও স্তন ক্যানসার।
৫. জীবাণুনাশক গুণ: গবেষণা দেখা গেছে, পেঁয়াজের নির্যাস স্ট্যাফিলোকক্কাস ও সালমোনেলার মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমন করতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: পুষ্টিবিদরা পেঁয়াজ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুমে ধরেছেন এগুলো হলো:
হজমের সমস্যায়: পেঁয়াজে থাকা ফ্রুকটান নামক কার্বোহাইড্রেট কিছু মানুষের পেট ফাঁপা, গ্যাস ও পেটব্যথার কারণ হতে পারে—বিশেষ করে যারা আইবিএস সংবেদনশীলতায় ভোগেন।
অ্যালার্জির ঝুঁকি: কিছু মানুষের পেঁয়াজে অ্যালার্জি হতে পারে। এর লক্ষণ হতে পারে চুলকানি, ফুসকুড়ি থেকে শুরু করে গুরুতর শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত।
দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস: পেঁয়াজে সালফারের উপস্থিতি কারণে খাওয়ার পর দীর্ঘসময় ধরে মুখে দুর্গন্ধ থাকতে পারে।
পেঁয়াজ খাওয়ার সেরা উপায়: পুষ্টিবিদরা পেঁয়াজ খাওয়ার বিষয়ে বেশকিছু উপায় জানিয়েছেন। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ক্যারামেলাইজড: পেঁয়াজ ধীরে ধীরে ক্যারামেলাইজ করে নিলে এটি মিষ্টি, গভীর স্বাদ ও ঘ্রাণে ভরপুর হয়। এটি বার্গার, পিজ্জা কিংবা স্টেকের সঙ্গে খাওয়া যায়।
রোস্ট করা: রোস্ট করলে পেঁয়াজের প্রাকৃতিক মিষ্টতা বেড়ে যায়। ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ২৫–৩০ মিনিট বেক করুন—হবে অসাধারণ একটি সাইড ডিশ।
গ্রিল করা: অর্ধ ইঞ্চি পুরু করে কাটা পেঁয়াজে অলিভ অয়েল ও লবণ দিয়ে গ্রিল করুন। এতে পেঁয়াজে স্মোকি স্বাদ আসে, যা সালাদ কিংবা গ্রিল মিটের সঙ্গে উপযুক্ত।
কাঁচা: লাল পেঁয়াজ কাঁচা খাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। সালাদ, স্যান্ডউইচ কিংবা সস—সবখানেই কাঁচা পেঁয়াজ অনন্য। বেশি ঝাঁজ কমাতে চাইলে ঠান্ডা পানিতে ১০–১৫ মিনিট ভিজিয়ে নিন।
পেঁয়াজ শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, বরং শরীরের জন্যও উপকারী এক উপাদান। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁয়াজ রাখলে হজম ভালো থাকে, হৃদয় ও চোখ সুস্থ থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিছু রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে যাদের অ্যালার্জি বা হজমের সমস্যা আছে, তাদের পেঁয়াজ খাওয়ার আগে একটু সচেতন হওয়া ভালো।
Comments