জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রক্তাক্ত হলো ৩ বছরের শিশু

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় জমি-সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধের জেরে বর্বর হামলার শিকার হয়েছে তিন বছরের শিশু কন্যা জোবাইদা। বর্তমানে সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (১৮ মে) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে শিবালয় মডেল ইউনিয়নের ঝড়িয়ারবাগ এলাচিপুর গ্রামে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ওই জমি নিয়ে মাপঝোঁক ও সালিশ চলাকালে অতর্কিতভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে সজিব, নাসির, বসিরসহ কয়েকজন প্রথমে হামলা চালায় রাব্বী নামের এক যুবকের ওপর। রাব্বী থানায় আশ্রয় নিলে তারা তার বাবা আছলামকে আঘাত করে। এরপর নজরুল গং বাড়িতে ঢুকে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে তিন বছরের শিশু জোবাইদাকে।
রক্তাক্ত অবস্থায় জোবাইদা বাড়ির বারান্দায় পড়ে যায়। হামলাকারীরা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জোবাইদার মা বলেন, "জমির জন্য আমাদের সঙ্গে বিরোধ, কিন্তু আমার নিষ্পাপ মেয়েটার সঙ্গে ওদের কী শত্রুতা? তারা গেট ভেঙে ঢুকে আমার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।"
জোবাইদার নানী মরিয়ম বেগম জানান, "চেয়ারম্যান, মেম্বারদের উপস্থিতিতে মাপঝোঁক চলছিল। হঠাৎ নজরুল ও তার দলবল অতর্কিতে হামলা চালায়। আমার জামাতা, মেয়ে ও বেয়াই আহত হন। এবং আমার তিন বছরের নাতনিকে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।"
জোবাইদার দাদা আছলাম বলেন, "আমরা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই নজরুল লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। আমার ছেলেও আহত হয়। তারা আমার নাতনিকে হত্যার চেষ্টা করে, তবে স্থানীয় একজনের সহায়তায় বউ ও নাতনি প্রাণে রক্ষা পায়।"
শিশুটির চিকিৎসক ডা. তপরেশ বিশ্বাস জানান, "জোবাইদার মাথায় ছয়টিরও বেশি সেলাই লেগেছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।"
স্থানীয় সূত্র জানায়, হামলাকারী নজরুল ইসলাম জোবাইদার চাচাতো মামা। নজরুলের নানা আবুল হায়াত তার দুই মেয়ের নামে ২১ শতাংশ জমি লিখে দেন। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ জমি দখলে রেখে নজরুল সেগুলো বুঝিয়ে না দিয়ে বর্বর হামলার পথ বেছে নেয় বলে স্বজনদের অভিযোগ।
শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, "জমি-সংক্রান্ত সালিশি সভা চলছিল। আমি থানায় কমিউনিটি পুলিশিং ডে'র কারণে উপস্থিত ছিলাম। পরে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। বিষয়টি তদন্তাধীন।"
এ ঘটনায় জোবাইদার বাবা নজরুল ইসলামসহ ৯ জনকে আসামি করে শিবালয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানার ওসি মো. কালাম হোসেন জানান, "অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।"
শিশু জোবাইদার পরিবার হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Comments