জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ

জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মাহবুবুর রহমান এর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অভিযোগের যেন শেষ নেই। আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে দু হাতে কামিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত পায়নি। জামালপুরের সচেতন শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে উঠে আসে এই অভিযোগের চিত্র।
মাহবুবুর রহমান মাদারগঞ্জের ১ নং চরপাকেরদহ ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের মো: আব্দুর নূর এর ছেলে। বর্তমানে তিনি জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কাম-কম্পিউটার অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাহবুবুর রহমান মাদারগঞ্জ উপজেলায় কর্মকালীন সময়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৯১ টি বিদ্যালয়ের বরাদ্ধকৃত রুটিন মেইনটেইন্স এর প্রতি বিদ্যালয় বাবদ ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি এই টাকা বিলুপ্তি হয়েছে বলে জানান।
মাহবুবুর রহমান এর বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ উপজেলাধীন চরবন্দ নব্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম এর IPEMIS এর তথ্য জালিয়াতিতেও সার্বিক সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। রফিকুল ইসলাম এর জন্ম তারিখ ঘষামাজা করে পরিবর্তন করে ৮ বছর বৃদ্ধি বাড়িয়ে ৪ এপ্রিল ১৯৬১ এর পরিবর্তে সার্ভিস বুকে কাটাছিড়া করে, ৪ এপ্রিল ১৯৬৯ করেন।
মাহবুবুর রহমান এর সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সখ্যতার অভিযোগেরও প্রমাণ মিলেছে। তার অনিয়মের নেপথ্যে ছিলেন কতিপয় দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। নিজের মনমতো অফিসে বদলীর ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। মেলান্দহ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বদলী হতে তৎকালীন জেলার প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এর সুপারিশ পত্র নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রভাবখাটিয়ে যোগদান করেন তিনি।
মাহবুবুর রহমানের নানা অনিয়ম নিয়মে পরিণত হওয়ায় বিগত দুই বছরে জামালপুর জেলায় ৩ টি উপজেলায় প্রশাসনিক বদলী হলেও অনিয়ম আর দুর্নীতিতে এখন সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করছেন।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারে থাকাকালীন সময়ে মাহবুবুর রহমানের রাম রাজত্ব চলে তার অফিসে। তার গ্রামের বাড়ি মাদারগঞ্জে হওয়ায় তার সাথে সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম সহ আওয়ামী দোসরদের দারুণ সখ্যতা ছিলো। আওয়ামী লীগ নেতাদের শিক্ষা অফিসের নিয়ন্ত্রণের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মাহবুবুর রহমান। যার কারণে সহজেই বদলী হয়ে এসেই সাধারণ শিক্ষকদের সাথে হুমকী ধামকী দিয়ে কথা বলতেন। সাধারণ শিক্ষকদের বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সাধারণ শিক্ষকরাও ভয়ে মুখ খুলতে পারতো না।
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠেন মাহবুবুর রহমান। স্বল্প বেতনে অফিস সহকারী পদে চাকরী করলেও ২ লাখ টাকার দামী ফোন, লাখ লাখ টাকার ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের দামী মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন তিনি। এছাড়াও অর্ধ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি প্রাইভেটকার।
অভিযোগসূত্রে আরও জানা যায়, মাহবুবুর রহমান এর জামালপুর শহরে আমলাপাড়ায়, ফুলবাড়িয়া এলাকায় নামে বেনামে জায়গা জমি কিনেছেন। রয়েছে দুটি কোটি টাকা মূল্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মাদারগঞ্জেও রয়েছে তার একাধিক প্রতিষ্ঠান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরী করে এমন অর্থের মালিক বনে যাওয়া মাহবুবুর রহমান এর আলাদীনের চেরাগের নেপথ্যে রয়েছে দুর্নীতি আর অনিয়ম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে এইসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিৎ। দুর্নীতির শেকড় সমেত মূলোৎপাটন করার এখনই সময়।
এ ব্যাপারে মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, IPEMIS এ আমার কোন আইডি নেই। তাই আমার টাকা আত্মসাৎ করার কোন সুযোগই নেই । কোন শিক্ষকের জন্ম তারিখ পরিবর্তনেও তিনি কিছু জানি না । তবে বদলীর জন্য ২০২৩ সালে সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের সুপারিশ নিয়েছিলাম। তবে জেলা অফিসে পদ খালি না থাকায় সুপারিশ কাজে লাগেনি। পরে একজন বদলী হলে আমি আবেদন করলে এখানে বদলী হই। আর আমি কোনদিন কোন রাজনৈতিক দলের সাথেও সম্পৃক্ত হয় নাই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আমার প্রবাসে থাকা শ্যালক আমাকে উপহার দিয়েছেন। তবে আমার একটি মোটরসাইকেল আছে। আমার বাবার একটি ব্যবসার প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানেই আমি সময় দেই। আর প্রাইভেটকারটি আমার বাবার। আমি ১২ লাখ টাকা দিয়ে একটা জমি নিয়েছি। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা ব্যাংক লোন আছে। আসলে কতিপয় শিক্ষক সুযোগ সুবিধা নিতে পারেনি বলেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।
Comments