শিবচরে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম

দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান অবলম্বন। মেধা ও মননে আধুনিক এবং চিন্তা- চেতনায় প্রাগ্রসর একটি সুশিক্ষিত জাতিই একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় রয়েছে ভিন্ন চিত্র। শিক্ষক স্বল্পতার কারনে শিক্ষার মূল ভিত্তি প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। ফলে শিক্ষার মূল ভিত্তিটাই দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।
শিবচর প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, শিবচর উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৮০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৯,৩৫৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে। সে হিসেবে ১৮০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮০ জন প্রধান শিক্ষক ও ৯৬০ জন সহকারী শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক আছেন যথাক্রমে ১২৩ ও ৮৯৬ জন।তাছাড়া সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ ৭টি থাকলে ও কর্মরত আছেন ৫ জন।
এহেন পরিস্থিতিতে,বিদ্যালয় মনিটরিং, সময়মত শিক্ষকদের উপস্হিতি, পাঠদান ও শিক্ষার মান উন্নয়ন সহ সার্বিক বিষয়ে খবরাখবর নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রকৃত শিক্ষাদান নিবারিত হচ্ছে।
কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তাদেরকে প্রায়শই অফিসিয়াল কাজে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যেতে হয়।তাছাড়া মাসিক সমন্বয় মিটিং তো আছেই। এমনেই তো শিক্ষক স্বল্পতা,তার উপর অফিসিয়াল কাজের দৌড়াদৌড়িতে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে শিক্ষাদান কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাই দীর্ঘদিন যাবত চলে আসা এধরণের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করা প্রয়োজন।
নূরুল আমিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এখলাস উদ্দিন চুন্ন বলেন, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিষ্ঠানটিকে যথাযথ ভাবে সচল ও সক্ষম রাখতে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান প্রধানই প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব দেন।নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।
এক শিক্ষার্থী অভিভাবক গোলাম মাওলা মোড়ল বলেন, সংবিধান ও শিক্ষা নীতিতে সবার জন্য একই মানের শিক্ষার কথা থাকলেও দেশের ১১ রকমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।এর মধ্যে সবচেয়ে দূর্বল ব্যবস্হাপনায় আছে যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেখানে সাধারণ জনগণ শিক্ষা গ্রহণ করে। সেখানকার অবস্থাই যদি এমন সংকটাপন্ন হয়, তাহলে সাধারণ জনগণের ভবিষ্যতটা কী?
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি মোঃ গোলাম মাওলা বলেন,সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বিভিন্ন কারণে আটকে আছে।পদোন্নতি চালু হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।
সহকারী শিক্ষক সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম রবিউল বলেন,একটি মামলার কারণে দীর্ঘদিন যাবত সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকে আছে। আশা রাখি শীঘ্রই এ মামলার রায় হবে এবং পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হবে। তখন এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন মিয়া এ ব্যাপারে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ একটি সরকারী প্রক্রিয়া। এখানে আমাদের করার তেমন কিছু নেই। তারপর ও আমরা এ সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ভাবে অবগত করে আসছি।
Comments