নওগাঁয় বাবার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মেয়ের

নওগাঁয় নিজ কন্যার বাড়িঘর ও সম্পত্তি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজ নামে খারিজ এবং পরবর্তীতে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল মজিদ সরকার নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এছাড়া মেয়ে ও তাঁর সন্তানদের মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাবা ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ সোমবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী মাসুদা খানম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসুদা খানম বলেন, জীবিকার তাগিদে এক যুগ আগে মাসুদা খানম সিংগাপুরে পাড়ি জমান। সেখানে থাকা অবস্থায় নওগাঁ শহরের সরদারপাড়া এলাকায় বাবা আব্দুল মজিদের কাছ থেকে দান কবলা দলিল মূলে জমিতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। বিদেশে থাকা বাড়ি ও জমিজমা তত্ত্বাবধানের জন্য মাসুদা বাবা আব্দুল মজিদকে পাওয়ার অ্যাটর্নি দেন। মেয়ের বাড়ি ও সম্পত্তি তত্ত্ববধানের নামে পাওয়ার অ্যাটর্নি নিয়ে মেয়েকে না জানিয়ে নিজ নামে খারিজ করে নেন এবং পরবর্তীতে বিক্রি করে দেন। আব্দুল মজিদ এসব তথ্য মেয়ের কাছ থেকে গোপন রাখেন। ২০২০ সালে সিংগাপুর থেকে আসার পর মাসুদা পরিবার নিয়ে নিজের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ২০২২ সালে বাবার প্রতারণার বিষয়টি জানার পর তিনি আদালতে দলিল রহিতের আবেদন জানিয়ে মামলা করেন। মামলাটি এখনও চলমান আছে। আদালত ওই বিবদমান জমির ওপর স্ট্যাটাসকে আদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ রায় না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি বর্তমানে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।
মাসুদা খানম আরও বলেন, মামলা করার পর থেকেই মাসুদা ও তাঁর সন্তানদের ওই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পাঁয়তারা করে আসছিল মজিদ সরকার। গত ২৬ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে আব্দুল মজিদ সরকার, তাঁর তৃতীয় স্ত্রী মেরিনা খাতুন, পার-নওগাঁ স্টেডিয়ামপাড়ার বাসিন্দা আবু তারেক সরকার, পার-নওগাঁ বউ বাজার এলাকার বাসিন্দা শাহাবুলসহ ২০-২২ জন অস্ত্রধারী হামলা চালিয়ে মাসুদা ও তাঁর সন্তানদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের দেন। হামলায় আহত মাসুদা খানমের ছেলে মাসুক ইসলাম ওরফে আলিফ নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলাকারীরা তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়িতে তালা মেরে দিয়েছে। এরপর থেকে মাসুদা খানম সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না। বাড়িতে ঢুকতে না পারায় সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিনি দাবি করেন, বাড়িতে নগদ ৩ লাখ টাকা, দুটি মোবাইল ফোন, একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার, একটি ল্যাপটপ, পৌনে ৬ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কারসহ অনেক মূল্যাবান আসবাব রয়েছে। সেগুলো তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ঘটনার দিনই নওগাঁ সদর মডেল থানায়, সৎ মা মেরিনা খাতুনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা খাতুন মাসুদা খানম। কিন্তু আসামিরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করলেও পুলিশকে অভিযুক্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্টো তাঁরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাসুদা খানমের বাবা আব্দুল মজিদের মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মাসুদা খানমের চাচা আলী হাসান সরকার জুয়েল দাবি করেন, 'ভাতিজি মাসুদা খাতুন একজন বখে যাওয়া মেয়ে। তার অত্যাচারে পরিবারের সকলে অতিষ্ঠ। বিরোধপূর্ণ ওই জমি ও বাড়ি আব্দুল মজিদেরই। মাসুদা ও তাঁর সন্তানদের মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।'
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নওগাঁ সদর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, 'বসতবাড়ির জমি নিয়ে মেয়ে ও বাবার মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে মারপিটের ঘটনায় মাসুদা খানম নামের এক নারী মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে কারও জমির দখল বুঝে দেওয়া পুলিশের কাজ নয়। বিরোধ জমি নিয়ে উভয়পক্ষের আদালতে মামলা চলছে। কারও জমির দখল বুঝে নিতে আদালত নির্দেশ দিলে তখন পুলিশ অবশ্যই সেখানে দায়িত্ব পালন করবে।'
Comments