হৃদরোগে মৃত্যুহার কমাতে নওগাঁতে উন্নত হচ্ছে সেবার মান

দেশে বহু মানুষ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের ফলে হার্ট এটাক, স্ট্রোক ও অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য মতে দেশে প্রতি বছর ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৩১ জন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রন (এনসিডি) কর্মসূচীর উদ্যোগে ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় নওগাঁয় হৃদরোগে মৃত্যুহার কমাতে সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছে। এজন্য হৃদরোগে মৃত্যুহার কমাতে নওগাঁতে এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে সেবার মান উন্নত হচ্ছে বলে মন্তব্য বরেছেন নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম।
গতকাল (আজ) সোমবার সকালে নওগাঁর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে ৪দিন ব্যপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, এ বছরের মধ্যে দেশে হৃদরোগ জনিত মৃত্যুরহার এক চতুর্থ অংশ কমিয়ে শতকরা ২৫ ভাগে, উচ্চ রক্তচাপের ব্যপকতা কমিয়ে ১৮ ভাগে নিয়ে আসা এবং একইসাথে লবন ব্যবহারের হার শতকরা ২৫ ভাগ কমানোর পরিকল্পনা বস্তবায়নে জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রনে সরকার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, পরামর্শ ও ঔষধ প্রদান করছে। এদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপের রোগী পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই কর্নারগুলো থেকে প্রাপ্তবয়সী সকলকে আধুনিক ডিজিটাল মেশিনের মাধ্যমে রক্তচাপ পরিমাপ করা হবে এবং সকল রোগীর তথ্য সিম্পল এ্যপস ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হবে এবং তাদের উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের হার মনিটরিং এর কাজ করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ প্রোগ্রামের এডিশনাল ডিরেক্টর ডা: মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মনীর আলী আকন্দ, মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফায়সাল নাহিদ, মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খুরশিদুল ইসলাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ প্রোগ্রামের বিভাগীয় প্রোগ্রাম অফিসার এহসানুল আমিন ইমন, সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার ডা: প্রিতম সাহা প্রমূখ।
বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ প্রোগ্রামের এডিশনাল ডিরেক্টর ডা: মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, অসংক্রামক রোগ সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারন। বিশ্বে প্রতিবছর ৪ কোটির বেশি মানুষ অসংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন, এই হার মোট মৃত্যুর শতকরা ৭৪ ভাগ। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে এই হার আরো বেশি। আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর শতকরা ৩৪ ভাগ সংগঠিত হয় হৃদরোগে। ধূমপান ও তামাক বা তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার, এলকোহল বা মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন, শারিরিক পরিশ্রম না করার বিষয়গুলো এনসিডি জনিত দুই তৃতীয়াংশ মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বায়ন ও নগরায়নের ফলে বায়ূদূষণ, খাদ্যাভাস ও জীবনচারনের পরিবর্তনের ফলে অধিক মাত্রায় মানুষ অসংক্রামক রোগে বিশেষত উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিসের শিকার হচ্ছেন। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে মানুষের জীবনচারন পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হবে।
৪ দিনের এই প্রশিক্ষন কর্মশালায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসার, নার্স, উপ-সহকারী কম্যুনিটি মেডিকেল অফিসার, স্টোরকিপার ও পরিসংখ্যানবিদগণ উপস্থিত ছিলেন।
Comments