আফ্রিকা থেকে পিঁপড়া পাচার হচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ায়

ইউরোপ ও এশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল পরিমাণে বড় আকারের লাখ লাখ পিঁপড়া পাচার হচ্ছে। ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোতে এসব পিঁপড়া পোষা প্রাণী হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়া থেকে সম্প্রতি হাজার হাজার জীবন্ত পিঁপড়া পাচারকালে ৪ চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিঁপড়াগুলো ইউরোপ ও এশিয়ার বিদেশি পোষা প্রাণীর বাজারে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছিল। এ ঘটনায় চোরাকারবারিদের বন্যপ্রাণী পাচারের দায়ে শাস্তি দেওয়া হবে। কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস (কেডব্লিউএস) এই মামলাকে একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছে।
কেডব্লিউএস জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ জীবন্ত রানি পিঁপড়া আটক করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত মূল্যবান 'মেসর সেফালোটিস' প্রজাতি, যা 'জায়ান্ট আফ্রিকান হারভেস্টার' পিঁপড়া নামেও পরিচিত। পিঁপড়াগুলো মডিফাইড টেস্টটিউব ও সিরিঞ্জে লুকানো ছিল।
সংস্থাটি বিবৃতিতে বলেছে, 'তদন্তে জানা গেছে, টেস্টটিউবগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে পিঁপড়াগুলো দুই মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়।' এটিকে 'পরিকল্পিত এবং সুচারুরূপে কার্যকর' বলে বর্ণনা করেছে তারা।
অনেকে পিঁপড়াকে বিরক্তিকর মনে করলেও, কিছু মানুষ পিঁপড়াকে ফর্মিকারিয়ামে (কাচের পাত্র) রেখে তাদের জটিল কলোনি তৈরি করা দেখে আনন্দ পান। রয়টার্সের কাছে আসা আদালতের নথি অনুসারে, কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫ হাজার রানি পিঁপড়া আটক করা হয়েছে। এগুলো ২ হাজার ২৪৪টি পাত্রে রাখা ছিল এবং এর বাজারমূল্য প্রায় ১০ লাখ কেনিয়ান শিলিং বা ৭ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার।
এদিকে, গত সোমবার দুই বেলজিয়ান, এক ভিয়েতনামি ও এক কেনিয়ান নাগরিক জীবন্ত বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে রাখা ও পাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা আবারও জমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আদালতে হাজিরা দেন। বেলজিয়ান চোরাকারবারি ডেভিড লর্নয় আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, 'আমরা এখানে কোনো আইন ভাঙতে আসিনি। ভুলবশত এবং বোকামির কারণে এটা হয়ে গেছে।'
আদালত আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেছে। কেডব্লিউএস, কেনিয়ার জাতীয় জাদুঘর এবং প্রবেশন অফিসারের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সেদিন শাস্তি ঘোষণা করা হবে। চোরাকারবারিরা আপাতত কারা হেফাজতে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিঁপড়া ব্যবসার একটি সূত্র জানিয়েছে, মেসর সেফালোটিস পিঁপড়া রপ্তানির জন্য কেডব্লিউএসের লাইসেন্স এবং স্বাস্থ্য সনদের প্রয়োজন হয়। সূত্রটি আরও জানায়, কেনিয়ার স্থানীয় এই প্রজাতির পিঁপড়াটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং এটি পাওয়াও কঠিন।
বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ পিঁপড়া বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যান্টসরুস এই প্রজাতিকে 'দেখতে সত্যিই অসাধারণ' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, 'মেসর সেফালোটিস অনেকেরই স্বপ্নের প্রজাতি। রানি পিঁপড়াগুলো প্রায় ২০-২৪ মিমি লম্বা হয় এবং এদের রং লাল ও বাদামি/কালো মিশ্রিত।
Comments