আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে বলা হয়েছে, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের দুর্বলতার কারণে মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ব্যাংকের শ্রেণিকৃত বিনিয়োগ ও পুঞ্জীভূত ক্ষতি বিপুল। ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা ও তারল্যসংকট তীব্র হয়েছে। আর্থিক সংকটের পাশাপাশি পর্ষদের নীতিনির্ধারণে দুর্বলতার কারণে ব্যাংকিং সুশাসন বিঘ্নিত হচ্ছে। পর্ষদ আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এসব কারণে আমানতকারীদের স্বার্থ ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীন বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষায় এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ করা হলো।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। তখন এটি আল-বারাকা ব্যাংক নামে পরিচালিত হতো। ১৯৯৪ সালে এটি 'সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে' পরিণত হয়। তখন ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ত্রুটিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রথা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০০৪ সালে এটি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক নামে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে।
ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দেয়। ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে ৩৪টি মামলা হয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষায় ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালককে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের আগস্টে ব্যাংকটির অধিকাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০০৮ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিলেও মামলা ও পুরোনো খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে।
Comments