শিকলে বেঁধে ফেরত পাঠানো: ভারতীয়রাই ট্রাম্পের রোষানলে

অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির দ্রুত বাস্তবায়ন চলছে। টেক্সাসের সান আন্তোনিও থেকে একটি মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ সি-১৭ তে শতাধিক ভারতীয় নাগরিককে নয়াদিল্লি ফেরত পাঠানো হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে পাঞ্জাবের অম্রিতসরের বিমানবন্দরে ১১৬ ভারতীয় বহনকারী উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। এর আগে, ৫ ফেব্রুয়ারি ১০৪ জনকে ফেরত পাঠায় ট্রাম্প প্রশাসন। ওই সময়ও শিকলে তাদের হাত-পা বাঁধা ছিল। এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সেইসঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয় রয়েছেন। নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন যৌথভাবে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় অভিবাসীকে চিহ্নিত করেছে, যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। এছাড়া, দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের জন্য ইস্যু করা এইচ-১বি ভিসার বড় অংশই ভারতীয়দের দখলে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরে এসেছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ফোনালাপে অভিবাসন ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ট্রাম্প জানান, মোদি অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে 'সঠিক পদক্ষেপ' নেবেন। তবে এই আলোচনার পরেও অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশই এই বিষয়ে সম্মত।
ভারতীয়দের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীদেরও ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ ব্যবহার করে গুয়াতেমালা, পেরু এবং হন্ডুরাসের অভিবাসীদেরও নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে, মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজের মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে দূরবর্তী গন্তব্য হচ্ছে ভারত।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোরতম অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীদেরও একই ধরনের পরিণতির শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সামরিক উড়োজাহাজের মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। তবে, প্রতিটি দেশের সঙ্গে বিশ্বের শক্তিধর এই দেশটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আলোচনার ভিত্তিতে এই প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি এবং সামরিক সম্পদ ব্যবহার করে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিশেষ করে, ভারতীয় অভিবাসীদের শিকলে বেঁধে ফেরত পাঠানোর ঘটনা মানবাধিকার এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অবৈধ অভিবাসীদের একই ধরনের পরিণতির আশঙ্কা রয়েছে, যা ভবিষ্যত কূটনৈতিক সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
Comments