আদর্শ দম্পতির বয়সের পার্থক্য যত বছর হওয়া উচিত

স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য নিয়ে অনেকের মাঝেই কৌতূহল রয়েছে। বিশেষ করে, এই পার্থক্য কত হওয়া উচিত—তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও হয়েছে। গবেষকরা সুখী দাম্পত্য জীবনের রহস্য উন্মোচনের জন্য নানা বিশ্লেষণ করেছেন। সাইকিসেন্ট্রালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই গবেষণাগুলোর তথ্য, যা জানাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য কত বছর হলে তা সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
মানসিক পরিপক্কতা ও সম্পর্কের স্থায়িত্ব: বয়সের সঙ্গে মানুষের মানসিক পরিপক্কতা বৃদ্ধি পায়, চিন্তাভাবনার ধরন বদলে যায়। মাইন্ডপাথের লাইসেন্সপ্রাপ্ত অ্যাডভাইজার ব্র্যান্ডি পোর্চে বলেন, সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়ে, যা মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনে।
যদি দুজনের মানসিক পরিপক্কতায় বড় পার্থক্য থাকে, তাহলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে। বয়সে বড় সঙ্গী অনেক সময় কম বয়সী সঙ্গীর আবেগকে গুরুত্ব না দেওয়ায় সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
সম্পর্কের অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জ: মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলর জিনামারি গুয়ারিনো বলেন, বয়সের পার্থক্য বেশি হলে সম্পর্ক নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
- স্বাস্থ্যগত পার্থক্য
- পরিবার পরিকল্পনা
- জীবনের অগ্রাধিকার
- আর্থিক সামর্থ্য
জীবনের একেক পর্যায়ে মানুষের অগ্রাধিকার ভিন্ন হয়। দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে উভয়ের অগ্রাধিকারের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ। না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জীবনের শেষ সময় নিয়ে শঙ্কা: অনেক সময় দেখা যায় সঙ্গীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জিনামারি গুয়ারিনো বলছেন, বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, অনেক সময় বয়সী ছোট সঙ্গীর মনে একা হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে। মূলত এই ভয়ের শুরু হয় আরেক সঙ্গীর বয়স বেশি হলে। বয়স্ক সঙ্গী আগে মারা গেলে কমবয়সী সঙ্গীর কি হবে এটা অনেক সময় সম্পর্কে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এই ভয় দুজনের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয় অনেক সময়।
স্বামী-স্ত্রীর আদর্শ বয়সের পার্থক্য যেমন হওয়া উচিত: ২০১৭ সালের একটি অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যাডি অনুসারে, সুখী, সফল দম্পতিদের বয়সের পার্থক্য ১ থেকে ৩ বছর, যেখানে পুরুষ তার নারী সঙ্গীর চেয়ে বয়সে বড়। গবেষণা থেকে জানা গেছে বিয়ের ৬ থেকে ১০ বছরের ভেতর যেসব দম্পতিদের বিচ্ছেদ হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশের বয়সের পার্থক্য ৭ বা তার বেশি। অনেক সময় দেখা গেছে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য বেশি হলে সম্পর্কে জটিলতা বেশি হয়। তবে কোনোভাবেই ঢালাওভাবে এমন মন্তব্য করা যাবে না। কারণ, বয়সের পার্থক্য সাত বা তার বেশি আবার বহু বছর ধরে সুখী দাম্পত্য সম্পর্কে রয়েছে, এমন দম্পতির সংখ্যাও কম না।
এমনকি অনেক সফল দাম্পত্য সম্পর্ক আছে, যেখানে নারী বয়সে পুরুষের চেয়ে বড়। হলিউড-বলিউডের একাধিক তারকা তার উদাহরণ। বয়সের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সম্পর্কে একজন আরেকজনকে সম্মান করছে কি না, ভালোবাসা আছে কি না, সম্পর্কের প্রতি দুজনেই আন্তরিক বা যত্নবান কি না। যদি দুজনের মানসিকতা আর চাওয়া একই হয়, তাহলে বয়স কেবলই একটা সংখ্যা।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালে কোরিয়ার এক গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায় যেসব দম্পতির বয়সের ব্যবধান বেশি তাদের মধ্যে হতাশাও বেশি। তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তায় থাকেন। সমবয়সী দম্পতিদের বিষণ্নতার হার সবচেয়ে কম। তিন বা তার থেকে বেশি বসের ব্যবধান দেখা দিলেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হতাশা, বিষণ্নতা দেখা দেয়।
Comments