বিনিয়োগে আস্থার শীর্ষে ১০ শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। বাজারের ওঠানামা অনেকটাই এ খাতের উপর নির্ভরশীল। ব্যাংক খাতের উত্থানেই পুঁজিবাজার গতিশীল থাকে। এ খাতে মোট ৩৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এরমধ্যে পুঁজিবাজারে কোন ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স সবচেয়ে ভালো তা বিশ্লেষণে বাজার মূলধন, লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা, আর্থিক সক্ষমতা (রিজার্ভ ও পরিশোধিত মূলধন), দামের ওঠানামার বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। এতে করে এই খাতে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলো সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেতে সক্ষম হবেন, যা তাদের বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে।
১. ব্রাক ব্যাংক পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ৫০০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১৭৬৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ৭.৫ শতাংশ বোনাস, ২০২০ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০২১ ও ২০২২ সালে ৭.৫ শতাংশ নগদ ও ৭.৫ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ২০১০ সালে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ৫৮.৯০-৩২.৪০ টাকা। বাজার মূলধন: ৯০২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: বাজার মূলধনের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে, তবে লভ্যাংশের পরিমাণ কিছুটা কম।
২.ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ২০০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১৬০৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ৫ হাজার ৬৭৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ১০ শতাংশ নগদ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। ১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ৭১.১০-৩২.৬০ টাকা। বাজার মূলধন: ৭০০৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: রিজার্ভের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তবে লভ্যাংশের হার একই থাকার কারণে বিনিয়োগকারীদের জন্য কম আকর্ষণীয় হতে পারে।
৩. ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসি : অনুমোদিত মূলধন ১৫০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৮৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ৩ হাজার ৯৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস, ২০২১ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২২ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ৭.৫০ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ১৭.৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ৬৩.৯০-৪৪.৪০ টাকা। বাজার মূলধন: ৪৫৮৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: উচ্চ লভ্যাংশ দেওয়ার ধারাবাহিকতা আছে, তবে বাজার মূলধনে ব্র্যাক ও ইসলামী ব্যাংকের তুলনায় পিছিয়ে।
৪. ইষ্টার্ন ব্যাংক পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ১৫০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৮৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ৩ হাজার ৯৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস, ২০২১ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২২ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ৭.৫০ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ১৭.৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ৬৩.৯০-৪৪.৪০ টাকা। বাজার মূলধন: ৪৫৮৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মতোই লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা ভালো, তবে বাজার মূলধন তুলনামূলক কম।
৫.পূবালী ব্যাংক লিমিটেড: অনুমোদিত মূলধন ২০০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১১৫৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ৩ হাজার ৬০৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ১০ শতাংশ নগদ, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে ১২.৫০ শতাংশ নগদ ও ২০২৩ সালে ১২.৫০ শতাংশ নগদ ও ১২.৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ৩১.৫০-২৩.০০ টাকা। বাজার মূলধন: ৩৩৮৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: লভ্যাংশ ধারাবাহিকভাবে রয়েছে, তবে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ তুলনামূলক কম।
৬. দি সিটি ব্যাংক পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ২০০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১৩৫২ কোটি ২০ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ২ হাজার ৪৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ নগদ, ২০২০ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০২১ সালে ১২,৫০ শতাংশ নগদ ও ১২.৫০ শতাংশ বোনাস, ২০২২ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ২ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ২৬.৭০-১৭.৩০ টাকা। বাজার মূলধন: ৩০৬৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: লভ্যাংশ ভালো, তবে বাজার মূলধন ও দামের ওঠানামা তুলনামূলক কম।
৭. প্রাইম ব্যাংক পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ২৫০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১১৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ২ হাজার ২২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ১৩.৫০ শতাংশ নগদ, ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ নগদ, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ২৬.০০-১৮.১০ টাকা। বাজার মূলধন: ২৮৫৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: নগদ লভ্যাংশ ভালো, তবে বাজার মূলধন ও রিজার্ভ তুলনামূলক কম।
৮. আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ১৫০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১১৫১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৩৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ১৩ শতাংশ নগদ, ২০২০, ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ নগদ, ২০২২ সালে ১২ শতাংশ নগদ ও ৩ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ১৯৯৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ২৮.২৬-১৮.০০ টাকা। বাজার মূলধন: ২১০৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা ভালো, তবে বাজার মূলধন ও রিজার্ভ কম।
৯. উত্তরা ব্যাংক পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ১৫০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৮২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ৭ শতাংশ নগদ ও ২৩ শতাংশ বোনাস, ২০২০ সালে ১২.৫০ শতাংশ নগদ ও ১২.৫০ শতাংশ বোনাস, ২০২১ ও ২০২২ সালে ১৪ শতাংশ নগদ ও ১৪ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ১৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ১২.৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। গত এক বছরের দর ওঠানামা: ২৭.৮০-১৮.৮০ টাকা। বাজার মূলধন: ২০৮০ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: বাজার মূলধন তুলনামূলক কম, তবে লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা ভালো।
১০. ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি: অনুমোদিত মূলধন ২৫০০ কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৯২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস: ২০১৯ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০২০ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২১ সালে ১২.৫০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২২ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০২৩ সালে ১২ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এক বছরের দর ওঠানামা: ৩৩.০০-২১.৫০ টাকা। বাজার মূলধন: ২০৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বিশ্লেষণ: লভ্যাংশ তুলনামূলক কম, তবে দামের ওঠানামা ভালো।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণ:
👉 বাজার মূলধন ও স্থিতিশীলতার দিক থেকে: "ব্র্যাক ব্যাংক" এগিয়ে।
👉 উচ্চ লভ্যাংশ দেওয়ার কারণে: "ডাচ বাংলা ব্যাংক" বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।
👉 সর্বোচ্চ রিজার্ভ থাকায় "ইসলামী ব্যাংক" দীর্ঘমেয়াদে আর্থিকভাবে শক্তিশালী।
Comments